পুরো অর্থবছরে এসেছে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ১০.৬৪%। সদ্য সমাপ্ত মাসে প্রবাসীরা আগের বছরের জুনের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন।
Published : 01 Jul 2024, 09:31 PM
প্রবাসী আয়ের গতি জোরালো হওয়ার মধ্যে সবশেষ মাস জুনে রেমিটেন্সে উল্লম্ফন হয়েছে; ৪৭ মাস পর সর্বোচ্চ আয় এসেছে ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
আগের বছরের জুনের চেয়ে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাসে রেমিটেন্স বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে জুন মাসে এতটা বেশি রেমিটেন্স এল ৪৭ মাস পর। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাইতে এসেছিল ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জুন মাসে রেমিটেন্স এসেছে ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার এবং পুরো অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।”
প্রবাসী আয়ে জুনের উল্লম্ফনের উপর ভিত্তি করে সদ্য সমাপ্ত পুরো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিটেন্স বেড়েছে আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরটি শেষ হয়েছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে রেমিটেন্স কোনো মাসে দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেনি। আয়ের নাজুক অবস্থা কেটে গিয়ে গত জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় প্রবাসীদের পাঠানো আয়। ওই মাসে প্রবাসী ও তাদের সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে জমা হয় ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছর মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে। এতে দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রাটির দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে যায়, যা আগের দিনও ছিল ১১০ টাকা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর পরামর্শ মেনে এখন থেকে এ পদ্ধতিতেই ডলারের দর নির্ধারিত করা হচ্ছে। ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলেন, ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করার পর ব্যাংকিং খাতে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে।
রেমিটেন্স বাড়ার বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চারটি কারণে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হারকে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করার কারণে রেমিটেন্সের দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে যায়। এতে দর বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭ টাকা। যদিও বর্তমানে ১১৮ টাকা করে দেওয়া আনুষ্ঠানিক দর নির্ধারণ করা হচ্ছে।
পাশাপাশি সরকারি আড়াই শতাংশ প্রণোদনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সের দর আর অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের দরের পার্থক্য কমে এসেছে। ফলে শ্রমিকরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানো আগের চেয়ে বাড়িয়েছে।”
তিনি বলেন, “ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলো সে মোতাবেক কাজ করছে। সামনে রেমিট্যান্সের এ প্রবাহ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করি।”
ব্যাংকাররা বলেন, সাধারণত রোজা, ঈদ, বাংলা নববর্ষকে ঘিরে প্রবাসীরা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়ে থাকেন। গত মাসে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন দেশে।
বেড়েছে রিজার্ভ
গত এক মাসে ডলারের বিপরীতে বিনিময় হার এক টাকা বাড়ায় জুনেও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ ও কয়েকটি সংস্থার পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা ঋণ যোগ হয় গত ২৬ জুন। এর সঙ্গে রেমিটেন্সের এ উল্লম্ফন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৭ জুন শেষে গ্রস হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে।
রিজার্ভ বেড়ে গ্রস হিসাবে অবশ্য আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২২ বিলিয়ন ডলার বলে জানান মুখপাত্র মেজবাউল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতির গ্রস হিসাবে তা ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।