শিশুদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৭ শতাংশ।
Published : 12 Jul 2023, 10:23 PM
চট্টগ্রামে সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে হেলমেট ব্যবহার ৬৮ শতাংশ হলেও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তা ৪৮ শতাশে নেমে আসে বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
বুধবার অস্থায়ী নগর ভবনে ২০২২ সালের দুই রাউন্ডের রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডির ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়; জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) যৌথভাবে এই সমীক্ষা পরিচালনা করছে।
এতে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ চালক ‘সঠিকভাবে’ হেলমেট ব্যবহার করেন। আর যাত্রীদের মধ্যে তা মাত্র ২০ শতাংশ।
পুরুষ যাত্রীদের মধ্যে ২৩ শতাংশ সঠিকভাবে হেলমেট ব্যবহার করলেও নারী যাত্রীদের মধ্যে এই সংখ্যা মাত্র ৬ শতাংশ।
মোটরসাইকেল চালক ও যাত্রীদের মধ্যে মোট ৫৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক হেলমেট ব্যবহার করলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৭ শতাংশ।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটির (বিআইজিআরএস) অংশ হিসেবে জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট তাদের স্থানীয় অংশীদার সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)- এর সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অংশ হিসেবে এই সমীক্ষা পরিচালিত হচ্ছে।
সিআইপিআরবি-এর পরিচালক (ট্রেনিং অ্যান্ড এডুকেশন) সেলিম মাহমুদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা বিশ্বে রোড সাইড অবজারভেশনের স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়। নগরীর ১৫টি স্পটে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ হয়। প্রতি স্পটে টানা তিনদিন তথ্য নেয়া হয়, এর মধ্যে দুদিন খোলা ও একদিন থাকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন।
“২০২২ সালে দুই রাউন্ডে যে তথ্য সংগ্রহ করা হছে তার ভিত্তিতে আজ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে।”
সমীক্ষা অনুসারে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ‘সঠিকভাবে’ হেলমেট ব্যবহারের হার কমে হয় ৫৫ শতাংশ এবং শনিবার তা আরও কমে ৪৮ শতাংশে দাঁড়ায়।
জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিটের সহযোগী বৈজ্ঞানিক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে বলেন, “মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে যথাযথ নিয়মে হেলমেট ব্যবহারের হার মাত্র ৬৮ শতাংশ এবং আরোহীদের মধ্যে যথাযথ নিয়মে হেলমেট ব্যবহারের হার মাত্র ২০ শতাংশ।
“যানবাহন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার মাত্র ১৫ শতাংশ। এছাড়া যাত্রী ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত যানবাহন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সিটবেল্ট ব্যবহারের প্রবণতা নেই বললেই চলে। ভারী যানবাহনের চালকদের ক্ষেত্রে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার মাত্র ৩ শতাংশ। যানবাহনে যাতায়াতকারী শিশুদের মধ্যে কাউকেই চাইল্ড-সিট তথা চাইল্ড-রেস্ট্রিয়েন্ট ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।”
সঠিকভাবে হেলমেট পরা ও সিটবেল্ট ব্যবহারে বাধ্য করতে আইন প্রয়োগের উপর জোর দেওয়ার কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, “চট্টগ্রামের সড়ককে নিরাপদ ও সচল রাখতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। তবে ট্রাফিক বিভাগের একার পক্ষে নিরাপদ সড়ক গড়া সম্ভব নয়। পুলিশের পাশাপাশি সকল অংশীজনকে নিয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
মঙ্গলবার উপস্থাপিত সমীক্ষা প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারি হিসেবে মোট ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে পথচারী ৮২ শতাংশ, মোটরসাইকেল আরোহী ১১ শতাংশ, সাইকেল আরোহী ২ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ অন্য যানবাহন ব্যবহারকারী।
অনুষ্ঠানে ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া আরও বলেন, “২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ তিনটি শ্রেণি, যাদের গবেষণায় ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা হলেন পথচারী, মোটরসাইকেল চালক এবং সাইকেল চালক।
“গবেষণামতে শতকরা ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে যানবাহনগুলো গতিসীমা অতিক্রম করে আর গতি সীমা অতিক্রম করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বাসের ক্ষেত্রে যা ৪৮ শতাংশ হারে দেখা যায়।”
অনুষ্ঠানে সিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর সড়ক-সংঘর্ষ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দুর্ঘটনার সঠিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা এসব তথ্যউপাত্ত যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারবে।”