“সামনে নির্বাচন, একটি মহল চাইবে শারদীয় দুর্গোৎসবে আঘাত এনে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে”, চট্টগ্রামে এক সমন্বয় সভায় বলেন মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য।
Published : 08 Oct 2023, 07:32 PM
দুর্গা পূজার মণ্ডপে ‘ডিজে পার্টি’ না করে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী ‘ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে’ পূজা করতে পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।
নির্বাচনের প্রাক্কালে দুর্গা পূজায় নিরাপত্তা নিয়ে আয়োজকরা শঙ্কা দেখলেও ‘সজাগ’ আছেন জানিয়ে চার স্তরের নিরাপত্তার কথাও বলেছেন।
রোববার নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের মাল্টিপারপাস শেডে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে নগর পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা সমন্বয় সভা হয়। এতে এসব কথা হয়।
সভায় চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, “সামনে নির্বাচন, একটি মহল চাইবে শারদীয় দুর্গোৎসবে আঘাত এনে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে।”
জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, “সমাজে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ও সচেতন মানুষ যারা আছেন, সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি সবার সমিল্লিত প্রয়াসে অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান আমরা যেভাবে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পেরেছি, সেভাবে শারদীয় দুর্গোৎসবও নির্বিঘ্নে, উৎসবমুখর পরিবেশের মাধ্যমে শেষ করতে পারব।”
সভায় জানানো হয়, নগরীতে এ বছর ২৭৮টি মণ্ডপে পূজা হবে। এর মধ্যে ১২৬টি মণ্ডপকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
সিএমপি কমিশনার মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নারী পুরুষদের জন্য আলাদা প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যবস্থা, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা এবং নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রাখাসহ বেশকিছু নিরপত্তামূলক পরামর্শ দেন।
গুজব নিয়ে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানানো হয় সভায়।
প্রতি মণ্ডপকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকার মুরুব্বি, সব পেশা ও ধর্মের লোকদের নিয়ে ‘সম্প্রীতি কমিটি’ গঠন করা হবে জানিয়ে কৃষ্ণপদ বলেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে পুলিশ।
পরে সাংবাদিকেদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “পূজায় কোনো হুমকি নাই। আমরা সবসময় ভালোর প্রত্যাশা করি, তবে খারাপের জন্য প্রস্তুতি রাখি।
“কোনো খারাপ পরিস্থিতি হলে সেটা কীভাবে মোকাবিলা করব, সে প্রস্তুতি আমাদের আছে। আমাদের কুইক রেসপন্ট টিম সবসময় প্রস্তুত থাকবে। পাশাপাশি সোয়াত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বোম্ব ডিস্পাজল টিমও আছে। খারাপ কিছু আশঙ্কা না থাকলেও অভিজ্ঞতা থেকে যে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেটা নেওয়া হবে।
‘প্রতিমা বিসর্জনে পতেঙ্গাই ভালো’
সভায় আগামী ২৮ অক্টোবর টানেল উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে নিরাপত্তা অজুহাতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে বিসর্জনের স্থান না সরানোর আহ্বান জানান পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা।
তারা বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা আধুনিকায়ন করার সময় বিসর্জনের জন্য ১২০ ফুট চওড়া জায়গা করা হয়েছে। যেখানে আগের বছরগুলোতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে।
পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, “পতেঙ্গার বদলে রাসমনি ঘাটে বিসর্জন স্থান নির্ধারণ করা হলে তাতে প্রতিমা বিসর্জনে অনেক সময় লেগে যাবে। এছাড়াও সেখানে কাদার কারণে বিসর্জনে সমস্যা সৃষ্টি হবে।”
বিসর্জনের বিষয়টি ‘আবেগের’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পতেঙ্গা থেকে সরানো হলেও অনেকের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।”
এ প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার বলেন, “যারা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন, তাদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে সুন্দর সমাধান বের করার চেষ্টা করা হবে।”
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এমএ মাসুদ, সিএমপি পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার জসীম উদ্দিন, দক্ষিণ জোনের মোস্তাফিজুর রহমান, ট্রাফিক পশ্চিম জোনের তারেক আহম্মেদ, সিটি করপোরেশন, সিভিল সার্জন, র্যাব, আনসার, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন থানা কমিটির নেতারা সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন।