এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারতের সরকার জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
Published : 04 May 2024, 10:15 AM
শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনেছে কানাডা পুলিশ। গ্রেপ্তারদের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
গত বছরের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরের এক ব্যস্ত কার পার্কে মুখোশধারী বন্দুকধারীরা নিজ্জারকে (৪৫) গুলি করে হত্যা করে।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কানাডা ও ভারতের মধ্যে বড় ধরনের কূটনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারতের সরকার জড়িত থাকতে পারে। তার এই মন্তব্যের পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নাজুক হয়ে পড়ে। নয়া দিল্লি জোরালোভাবে অভিযোগ অস্বীকার করে।
শুক্রবার এই গ্রেপ্তারের কথা ঘোষণা করে পুলিশ সুপার মনদীপ মুকার জানান, সন্দেহভাজনরা হচ্ছেন করণ প্রীত সিং (২৮), কমল প্রীত সিং (২২) এবং করণ ব্রার (২২) ।
এরা তিনজনই কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আলবার্টার এডমন্টন শহরে বসবাস করে। সেখান থেকেই এদের গ্রেপ্তার করা হয়।
কোর্ট রেকর্ডের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, এদের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগও আনা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা সবাই তিন থেকে পাঁচ বছর ধরে কানাডায় আছে।
তদন্ত অব্যাহত আছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে ‘ভারত সরকারের কোনো সম্পর্ক আছে কি না’ তাও খুঁজে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
সহকারী পুলিশ কমিশনার ডেভিড টেবুল বলেন, “এই ঘটনা নিয়ে পৃথক ও স্বতন্ত্র তদন্ত চলমান আছে, আজ যারা গ্রেপ্তার হয়েছে শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই।”
তদন্তকারীরা এ ঘটনা নিয়ে ভারতীয় তদন্তকারীদের সঙ্গেও কাজ করছে কিন্তু এই সহযোগিতা কয়েক বছর ধরে ‘বেশ কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং ছিল’ বলে জানান তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে এবং পরবর্তীতে আরও গ্রেপ্তার ও অভিযোগ আনা হতে পারে।
কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা নিজ্জার ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র ‘খালিস্তান’ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকাশে প্রচারণা চালাতেন।
১৯৭০ এর দশকে ভারতের শিখরা বিচ্ছিন্নতাবাদী এক লড়াই শুরু করেছিল। পরে ১৯৮০ দশকে এই লড়াইয়ের রক্তাক্ত অবসান ঘটে। তারপর থেকে শিখদের এই আন্দোলন ভারতের বাইরে যেখানে শিখদের বড় ধরনের উপস্থিতি আছে মূলত সেখানেই সীমাবদ্ধ আছে।
ভারত নিজ্জারকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দিয়ে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ করেছিল। কিন্তু নিজ্জারের সমর্থকদের দাবি, নয়া দিল্লির এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তারা জানান, তার তৎপরতার জন্য নিজ্জার আগেও প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন।
গত বছরের ১৮ জুন ভ্যাঙ্কুভারের শহরতলী সারির এক শিখ গুরুদুয়ারার নিকটবর্তী একটি কার পার্কে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন।
তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে কানাডার গোয়েন্দা বিভাগও তাকে সতর্ক করে বলেছিল, তিনি একটি ‘হিট লিস্টে’ আছেন এবং তার প্রাণনাশের হুমকি আছে।