হামলা ও পণ্য খালাসে বাধার অভিযোগ আইভোয়াকের

চট্টগ্রামভিত্তিক জাহাজ মালিকদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওর্নাস অ্যাসোসিয়শন (বিসিভোয়া) নেতৃবৃন্দের ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ হামলা ও বাধার ঘটনা ঘটাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন আইভোয়াকের নেতারা।

ডব্লিউটিসি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে কাজ শুরুর পর ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওর্নাস অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক) নিয়ন্ত্রণাধীন লাইটারেজ জাহাজে প্রতিপক্ষের হামলা ও পণ্য খালাসে বাধার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার নগরীর আগ্রাবাদে আইভোয়াকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন সংস্থাটির নেতৃবৃন্দ।

তাদের অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ নদীপথে পণ্য পরবিহনকারী লাইটারেজ জাহাজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলভুক্ত (ডব্লিউটিসি) বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওর্নাস অ্যাসোসিয়শন (বিসিভোয়া) নেতৃবৃন্দের ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ হামলা ও বাধার ঘটনা ঘটাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইভোয়াকের সহ-সভাপতি পারভেজ আহমেদ বলেন, “গত বছর চারেক ধরে বিসিভোয়া’র কিছু নেতার স্বৈরাচারী মনোভাব, অনিয়ম দুর্নীতি ও ডব্লিউটিসি পরিচালনায় একক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আইভোয়াক সদস্যদের ক্ষোভ ছিল।

“এর মধ্যে উচ্চ আদালত কর্তৃক সংস্থাটির নীতিমালা অবৈধ ঘোষণা করা হলেও ডব্লিউটিসির নির্বাহী সভায় এ নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি। সামগ্রিক বিবেচনায় গত ১৯ নভেম্বর আইভোয়াক এক পত্রের মাধ্যমে সদস্যপদ প্রত্যাহার করে।”

পারভেজ আহমেদ বলেন, “এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জরুরি সাধারণ সভা করে জাহাজ মালিকরা আইভোয়াকের নেতৃত্বে নতুন প্ল্যাটফরম করার সিদ্ধান্ত নেন এবং মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২০ ডিসেম্বর পণ্য পরিবহন পরিচালনা কার্যক্রমের শুরু করা হয়।”

তিনি অভিযোগ করেন, “বিসিভোয়ার নেতৃবৃন্দের ইন্ধনে কিছু শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর অন্যায়ভাবে আমাদের বরাদ্দ দেওয়া লাইটার কর্তৃক মাদার ভ্যাসেল থেকে কার্গো লোডিংয়ে বাধা দেয়। বিষয়টি বন্দর চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানানো হয়।”

গত বুধবার নারায়ণগঞ্জের শাহ সিমেন্ট ঘাটে আইভোয়াকের বরাদ্দ দেওয়া জাহাজে বাধা এবং শ্রমিকদের ওপর হামলার অভিযোগ করে পারভেজ আহমেদ বলেন, “এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনা কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে।”

এত ‘প্রতিবন্ধকতা’ সত্ত্বেও আইভোয়াক গত আট দিনে বিভিন্ন পণ্যের এজেন্টের চাহিদার বিপরীতে ২৬০টি লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

ডব্লিউটিসি ‘অবৈধ’ সংগঠন দাবি করে পারভেজ আহমেদ বলেন, “তাদের কর্মকাণ্ডের কোনো বৈধতা নেই। চলমান সংকট নিরসনে গত ২৪ ডিসেম্বর ডিজি শিপিং কার্যালয়ে ডব্লিউটিসিভুক্ত সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে ভবিষ্যতে পণ্য পরিবহনকারী লাইটারেজগুলোর পরিচালন প্রক্রিয়ার নীতিমালা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

কিন্তু বিসিভোয়া‘র নেতৃবৃন্দ সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার জন্য ‘উঠেপড়ে লেগেছে’ বলে আইভোয়াক নেতারা অভিযোগ করেন।

আইভোয়াকের সভাপতি হাজী সফিক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন দেশ থেকে সমুদ্রপথে মাদার ভ্যাসেলে (বড় আকারের জাহাজ) করে আমদানি করা পণ্য চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন করা হয় লাইটারেজ জাহাজে করে। এতদিন জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠন নিয়ে গঠিত ডব্লিউটিসি এ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করত। আমদানিকারকদের চাহিদার বিপরীতে লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দের কাজটি করত এই সেল।

২০০৩ সালে বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিসিভোয়া, ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং-আইভোয়াক এবং কোস্টাল ভ্যাসেল ওনার্স এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন মিলে ডব্লিউটিসি গঠন করে। দেড় হাজারের মত লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে ডব্লিউটিসি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত।

নানা অভিযোগ তুলে আইভোয়াক গত ১৯ ডিসেম্বর নগরীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠান করে ডব্লিউটিসি থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পৃথকভাবে পণ্য পরিবহনে লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দেওয়া শুরু করে।

পুরনো খবর

ডব্লিউটিসি থেকে বেরিয়ে গেলেন চট্টগ্রামভিত্তিক জাহাজ মালিকরা