চট্টগ্রাম: বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন এর সভায় এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত হয়।
Published : 11 Jan 2023, 11:25 AM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের বিভিন্ন ঘটনায় ছাত্রলীগের ১৭ নেতাকর্মীকে এবং নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে ছাত্র অধিকার পরিষদের এক কর্মীকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার রাতে উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন এর এক অনলাইন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয় মঙ্গলবার গভীর রাতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব রবিউল হাসান ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তাদেরই বহিষ্কার করা হয়েছে।“
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে ১১ অগাস্ট ছাত্রলীগ নেত্রীদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তাসফিয়া জান্নাত নোলককে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
২৪ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জোবায়ের হোসেনকে ক্যাম্পাস ‘অস্থিতিশীল’ করার অভিযোগে আটক করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আটকের পর জোবায়ের নিজেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। পরে জানা যায়, তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাথে যুক্ত।
ক্যাম্পাসে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার’ পরিকল্পনা করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় মামলাও করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রধান শেখ আবদুর রাজ্জাক।
সোমবারের বোর্ড সভায় জানানো হয়, শাটল ট্রেনে ‘নাশকতার পরিকল্পনা ও সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সাথে তার যুক্ত থাকার’ প্রমাণও মিলেছে। সভায় সর্বস্মতিক্রমে জোবায়ার হোসেনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর এ এফ রহমান হলে আরবি বিভাগের ছাত্র এবং দৈনিক নয়া শতাব্দী ও ঢাকা মেইলের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রেদুয়ান আহমেদকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনায় দুজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আরশিল আজিম নিলয় এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের শোয়েব মোহাম্মদ আতিক।
৮ অক্টোবর আলাওল হলের প্রভোস্ট কার্যালয় ভাঙচুর, প্রভোস্টকে টেলিফোনে হুমকি এবং কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র না হয়েও ‘জোর করে’ সেখানে অবস্থান, ভাঙচুরে অংশগ্রহণ এবং শিক্ষকের সাথে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের’ ঘটনায় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শহিদুল ইসলামকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ২ ডিসেম্বর রাতে এ এফ রহমান হলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া, কক্ষ ভাঙচুর, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি, প্রক্টরিয়াল বডির সাথে ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’ এবং কর্তব্যরত সাংবাদিকদের হামলার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ছয়জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন বিজয় ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) গ্রুপের সদস্যের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন- সংস্কৃত বিভাগের অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তনয় কান্তি সরকার ও নাহিদুল ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগের লাবিব সাঈদ ফাইয়াজ, ইতিহাস বিভাগের সিফাতুল ইসলাম ও মো. মোবারক হোসেন।
ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ, সেখানে দায়িত্বপালনকারী প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে ছয়জনের প্রত্যেককে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয় বোর্ড সভায়।
সবশেষ ৫ ও ৬ জানুয়ারি গভীর রাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী ও শাহজালাল হল সংলগ্ন এলাকায় পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া, দোকানপাট ভাঙচুর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতদের সাথে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের অপরাধে ছয়জনের প্রত্যেককে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক দুই গ্রুপ সিক্সটি নাইন ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস পরপর দুই রাত ওই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। বহিষ্কৃতরা হলেন- ফাইন্যান্স বিভাগের আমীরুল হক চৌধুরী, বাংলা বিভাগের মো. সাখাওয়াত হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাহমুদুল হাসান ইলিয়াস, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ ফাহিম, ইতিহাস বিভাগের মো. ইকরামুল হক ও দর্শন বিভাগের নয়ন দেবনাথ।
পুরনো খবর:
হলে চবি ছাত্রলীগের চার নেত্রীর ‘হাতাহাতি’
ক্যাম্পাস ‘অস্থিতিশীল’ করার অভিযোগে চবি শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার