চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ল ১০ মিটার ড্রাফটের প্রথম জাহাজ

এরপর নিয়মিতই বেশি গভীরতার জাহাজ বন্দরের জেটিতে ঢুকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2023, 04:01 PM
Updated : 15 Jan 2023, 04:01 PM

চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আগের চেয়ে বেশি ড্রাফট ও দৈর্ঘ্যের পণ্যবাহী জাহাজ ঢোকার পথ সুগম হয়েছে; প্রথমবারের মত ভিড়েছে ১০ মিটার ড্রাফটের একটি জাহাজ।

রোববার বিকালে মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী এমভি কমন এটলাস নামের একটি চিনিবাহী জাহাজ বন্দরের সিসিটি ১ জেটিতে ভেড়ে বলে জানিয়েছেন বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক।

৩৬ হাজার টন চিনিবাহী ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ জাহাজ বন্দর চ্যানেল দিয়ে ঢুকে জেটিতে ভেড়ার মাধ্যমে বন্দরের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক তৈরি করেছে বলে জানান তিনি।

প্রথমবারের মত এত বেশি ড্রাফটের (পানির নিচের অংশের গভীরতা) এবং বড় দৈর্ঘ্যের জাহাজ জেটিতে ভেড়ার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যয় কমবে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

রোববার বিদেশি এ জাহাজ ভেড়ার মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হল। আনুষ্ঠানিকভাবে সোমবার বন্দরের সিসিটি ১ জেটিতে বেশি ড্রাফটের জাহাজের বার্থিং কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বন্দর সচিব জানান, এরপর নিয়মিতই বেশি গভীরতার জাহাজ বন্দরে ঢুকবে। এজন্য একটি কারিগরি কমিটিও কাজ করছে।

এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের এবং ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারত।

সর্বশেষ ২০১৫ সালে কর্তৃপক্ষ বন্দরে প্রবেশকারী জাহাজের ড্রাফট ও দৈর্ঘ্য বাড়িয়েছিল। তার আগে আরও কম ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে ভিড়ত।

এ নিয়ে দীর্ঘ থেকে আলোচনার মধ্যে ২০২২ সালে লন্ডনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান বন্দর চ্যানেল নিয়ে গবেষণার পর ১০ মিটার ড্রাফট এবং দুইশ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে বলে সুপারিশ করে। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কাজ শুরু করে।

বন্দর সচিব ফারুক বলেন, ‘‘জাহাজের গভীরতা বেশি হওয়ায় পণ্য পরিবহনের পরিমাণও বাড়বে। এতে আমদানি-রপ্তানিকারকরা উপকৃত হবেন, সময় কম লাগবে এবং পরিবহন খরচও কম পড়বে। পাশাপাশি বন্দরের সক্ষমতাও বাড়বে।’’

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ১৯টি জেটি রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টিতে জাহাজ ভেড়ে।

বন্দর কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিদ্যমান ড্রাফট অনুযায়ী একটি জাহাজে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্র্ঘ্যের কন্টেইনার) পরিবহন করা হত। নতুন হিসাবে প্রতি জাহাজে করে ২৬০০ থেকে ২৮০০ টিইইউএস কন্টেইনার আনা যাবে।

আরও বড় জাহাজ বন্দরে সরাসরি ভেড়ার সুযোগ তৈরি হলে বহিনোঙরে পণ্য ওঠানামার ব্যয়ও কমবে।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর চ্যানেল নিয়ে সামগ্রিক একটি জরিপ ও গবেষণা কাজ করেছে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচ আর ওয়েলিংপোর্ট। তাদের প্রতিবেদনে বন্দরে বেশি গভীরতা ও দৈর্ঘ্যের জাহাজ ঢোকানোর বিষয়টি ছিল।

২০২২ সালের এপ্রিলে দেওয়া ওই প্রতিবেদনে ১০ মিটারের বেশি ড্রাফট এবং দুইশ মিটার লম্বা জাহাজ প্রবেশের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। তখন থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বড় জাহাজ ভেড়ানো নিয়ে কাজ শুরু করে।  

এতদিন ধরে বড় জাহাজ (বেশি ড্রাফটের) বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে অবস্থান করত এবং সেখানে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস করে ড্রাফঠ কমিয়ে বন্দরের জেটিতে আসত।

Also Read: চট্টগ্রাম বন্দরে ‘আরও বড়’ জাহাজ ভেড়ার পথ খুলছে