মোখায় বন্ধ এলএনজি: চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট ‘আরও এক সপ্তাহ’

ঘূর্ণিঝড় মোখা ধেয়ে আসতে থাকায় সাগরে থাকা এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয় সতর্কতার অংশ হিসেবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 09:31 AM
Updated : 14 May 2023, 09:31 AM

ঘুর্ণিঝড় মোখার কারণে এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবাহ বন্ধ থাকায় মানুষের যে দুর্ভোগ তৈরি হযেছে, তা এ সপ্তাহে কাটার সম্ভাবনা কম।

গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-কেজিডিসিএ জানিয়েছে, ছয় থেকে সাত দিন সময় লাগবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে।

তারা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, “এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ছয়-সাতদিন সময় লাগতে পারে।”

চট্টগ্রামে সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গৃহস্থালী মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিনশমিলিয়ন ঘনফুটের ওপরে গ্যাস প্রয়োজন। বাসাবাড়িতে চাহিদা ৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের মত। কেজিডিসিএ নিশ্চিত করেছে, চট্টগ্রাম এক প্রকার গ্যাসশূন্য।

সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) আমিনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “চট্টগ্রাম অঞ্চলে মূলত এলএনজি টার্মিনাল থেকে আসা গ্যাস দিয়েই চাহিদা মেটানো হয়। এর কারণে সেন্ট্রাল গ্রিড থেকে আমাদের গ্যাস দেওয়া হয় না। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ গ্যাস পাচ্ছে না।”

এলএনজি বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রিড থেকে কিছু গ্যাস চাওয়া হয়েছে। যদি কিছু গ্যাস পাওয়া যায়, তাহলে সোমবার নাগাদ ‘সুখবর’ মিলতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রোববার সকালে মোখা যখন উপকূল অতিক্রম শুরু করে, সে সময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৯৫ কিলোমিটার। ‘অতি প্রবল’ হিসেবে চিহ্নিত এই ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসতে থাকলে গত শুক্রবার রাতে সাগরে থাকা এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সতর্কতার অংশ হিসেবে টার্মিনাল দুটি মহেশখালীর নির্ধারিত জায়গা থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

ফলে ওই দুটি টার্মিনাল থেকে এতোদিন দৈনিক গড়ে যে ৭০০ এমএমসিএফ গ্যাস আসত তা বন্ধ রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানার পর ধীরে ধীরে এর শক্তি কমে আসছে। যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, ক্ষয়ক্ষতি ততটা হয়নি। তবে বন্ধ করে দেওয়া এলএনজি সরবরাহ আবার চালু করতে বেশ সময় নিতে চাইছে কেজিডিসিএ।

দুর্ভোগ চরমে

চট্টগ্রাম জেলায় বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন শিল্প কারখানা এলএনজি সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল।

দুইদিন ধরে গ্যাস না থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র যেমন বন্ধ, তেমনি জ্বলছে না ঘরের চুলা। গ্যাসচালিত যানবাহনের চাকাও ঘুরছে না।

সিএনজি স্টেশনগুলোতে জ্বালানি ভরতে না পেরে অটো রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের লম্বা লাইন পড়েছে। জ্বালানি সংকটে ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে পড়েছে অটোরিকশার।

নগরীর এনায়েত বাজার এলাকার বাসিন্দা সুরভী ঘোষ রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে চা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন।

তিনি বলেন, “গতকালও গ্যাস ছিল না। ছেলেমেয়েদের খাবার তৈরি করতেই হিমশিম খেয়েছি। আজকেও গ্যাস নেই। বাধ্য হয়ে ঘরের বাইরে লাকড়ির চুলোতে রান্না শুরু করেছি।”

মির্জারপুল এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, “দুইদিন ধরে ঘরে রান্না হচ্ছে না। হোটেলে গিয়েও ঠিকমতো খাবার কিনতে পারছি না। অতিরিক্ত দাম দিয়ে খাবার কিনতে হচ্ছে।”  

হালিশহর এলাকার গৃহিনী লুৎফুন্নেছা বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ বিপাকে পড়েছে। রান্না থেকে শুরু করে প্রতিদিনের কাজ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।”