আগামী ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে পূর্ণাঙ্গ ট্রায়াল রান হবে।
Published : 16 Oct 2023, 12:36 PM
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথকে ভবিষ্যতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
সোমবার সকালে ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে দোহাজারী এলাকায় এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী মোটর ট্রলিতে করে দোহাজারী থেকে নতুন নির্মিত এই রেলপথ ধরে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এর আগে দোহাজারীতে পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী বলেন, “এই প্রকল্পটি আজকে পরিদর্শন করার জন্য এসেছি। কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি দেখার জন্য। আশা করছি ৩০ তারিখের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ হয়ে যাবে। দুয়েকটা স্টেশনের কাজ হয়ত বাকি থাকবে। তবে রেল চলাচলের জন্য উপযোগী হবে। আমরা মোটর ট্রলি করে এখান থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যাব।
“এবং আমরা আগামী ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ একটা ট্রেন দিয়ে ট্রায়াল রান করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পূর্বে পরিপূর্ণভাবে তৈরি কিনা, তা নিশ্চিত হতে ট্রায়াল রান হবে।”
এই রেলপথে সুফল কী হবে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী বলেন, “মানুষ বিমানে-সড়ক পথে কক্সবাজার যায়। মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ট্রেনে করে কক্সবাজার যাবে। সারা দেশের মানুষের এই রেলপথ নিয়ে আগ্রহ, ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা সবসময় সাশ্রয়ী নিরাপদ আরামদায়ক। এর জন্য এই প্রকল্প। যাত্রীরা আশা করি উপভোগ করবে।
“এই রেলপথটি ধরে মাতারবাড়িতে যে ডিপ সি পোর্ট করছি, তার সাথেও ভবিষ্যতে যুক্ত করব। কাজেই বহুবিধ ব্যবহারের জন্য এটা করা হচ্ছে।”
পর্যটকদের জন্য পর্যটন ট্রেন বা কোচ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, “পর্যটন নগরীর সাথে উন্নত যাত্রীবাহী কোচ দেওয়ার উপযোগী করে কাজ করছি। এখনো পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ হয়নি। আমরা যাচাই বাছাই করে এটা করব। ১২ তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর জন্য ভাড়াটাড়া যা যা আছে সেগুলো আমরা দেখব।”
এই রেল পথ নির্মাণের আগে কক্সবাজারের সাথে দেশের বাকি অংশের রেল যোগাযোগ ছিল না। শুরুতে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণের যে প্রকল্প নেওয়া হয়, তাতে মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের কথা ছিল।
পরে রামু থেকে ঘুমধুম অংশের কাজ স্থগিত করা হয়। এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। তাতে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে এবং বাকি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের জন্য দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার অংশে কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে নয়টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু, ১৪৯টি বক্স কালভার্ট এবং ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট।
ট্রেনের অপেক্ষায় কক্সবাজার, শেষ সময়ে তোড়জোড়
বর্তমান সরকার ২০১০ সালে প্রকল্পটির প্রথম অনুমোদন দেয়। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ করার কথা ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে জমি অধিগ্রহণের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য এডিবিকে প্রস্তাব দেয় সরকার।
এডিবি বিশদ সমীক্ষা পরিচালনা করে ট্রান্স এশিয়ান রেল লাইনের আওতায় প্রকল্পটিতে অর্থায়নে সম্মতি দেয়। এরপর ২০১৭ সালে প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পটির ব্যয় ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। মহামারীর সময় কাজের অগ্রগতি প্রত্যাশিত না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।