বুধবার বিকালেও পুরোপুরি বিদ্যুৎহীন এ উপজেলা।
Published : 25 Oct 2023, 08:18 PM
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুনের’ তাণ্ডবে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে সাতটিতে ভেঙেছে চার হাজার ৭৮৪টি ঘর; যার মধ্যে শুধু বাঁশখালীতেই ভেঙেছে চার হাজার ৬৬১টি ঘর। ঝড়ের পরদিন বুধবার বিকালেও এ উপজেলা বিদ্যুৎহীন থাকার খবর মিলেছে।
চট্টগ্রামে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে জেলার বাঁশখালী ও সাতকানিয়া উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘর ভাঙার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ লাইন, মাছ ও বিভিন্ন বাগান।
ভেঙে যাওয়া ঘরগুলোর মধ্যে ২৮৩টি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাকিগুলো আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ।
তিনি জানান, মৎস্য অধিদপ্তর এক কোটি ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এক কোটি ৫ লাখ টাকা ক্ষতির কথা। আর বন বিভাগ তাদের এক কোটি টাকা ক্ষয়-ক্ষতির কথা দাবি করেছে।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাঁশখালী অঞ্চল) রীশু কুমার ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বাঁশখালীতে মূল লাইনের ৩৩ হাজার ভোল্টের ৫৩টি, ১১ কিলো ভোল্টের ৯০টি খুঁটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। সেগুলো ঠিক করতে ক্রেইন নেওয়া হলেও সড়কে ভেঙে পড়া গাছ সরাতে না পারায় সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না।
ডিজিএম রীশু বলেন, কী পরিমাণ মিটার ভেঙেছে তার সুনির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তা বিবেচনা করে সংযোগ চালু করতে হবে।
“তবে বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে মূল সংযোগ চালুর আশা করছি। ঘরবাড়ির সংযোগগুলো কবে ঠিক করা যাবে, সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।”
পাশের সাতকানিয়া উপজেলায় মূল সংযোগ চালু করে কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও পুরোপুরি ঠিক হতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সাতকানিয়া অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক সাইফুল আলম।
চন্দনাইশ উপজেলাতেও কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুৎ আসলেও পুরোপুরি সংযোগ চালু সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় হামুন। মূলত কক্সবাজার এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে রাত ১টার দিকে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয় ওই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র।
ঝড়ের তাণ্ডবে চট্টগ্রামের বাইরে কক্সবাজারেও মারা গেছে দুইজন। কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীতে মাটির দেওয়াল চাপায় একজন এবং মহেশখালী উপজেলায় গাছচাপায় একজনের মৃত্যুর খবর আসে রাতেই। এছাড়া দেয়াল চাপা ও গাছপালা পড়ে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ঝড় শুরুর পর বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে বিপুল সংখ্যক গাছপালা, কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে।
বাঁশখালী ও সাতকানিয়ায় মৃত্যু হয়েছে দুইজনের, আহত হয়েছেন আশি জনের বেশি মানুষ।
বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বুধববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাঁশখালীতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। সরল ইউনিয়নে একজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন প্রায় ৮৫ জন, উপজেলায় বিদ্যুৎ নাই। বিভিন্ন রাস্তায় গাছ পড়ে সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে।”
ঝড়ের মধ্যে গাছ চাপা পড়ে সাতকানিয়া উপজেলায়ও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঝড়ের মধ্যে গাছ চাপা পড়ে বকুমা খাতুন নামের ৬৫ বছর বয়সী ওই নারীর মৃত্যু হয়। তিনি খাগরিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে অনেক গাছপালা ভেঙেছে। গাছ ও ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়েছে। ১২৩টি ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য এসেছে।”
হামুন: চট্টগ্রামে ২ মৃত্যু, বিদ্যুৎ নেই দুই উপজেলায়
নিহতরা হলেন- বাঁশখালী উপজেলার সরল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মমতাজ বেগম (৭০) ও সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাকুমা খাতুন (৬৫)।
এদিকে দুপুরের দিকে সড়কে পড়া গাছ সরিয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে বাঁশখালী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, “মূল রাস্তা থেকে ভেঙে পড়া গাছপালা সরানো হলেও ভেতরের কিছু সড়কে বেশি গাছ ভেঙে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি।”