মঙ্গলবার ঝড় শুরুর পর থেকে রাতে রাস্তাঘাটের ওপরে গাছপালা ভেঙে পড়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
Published : 25 Oct 2023, 01:29 PM
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুনের’ তাণ্ডবে চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের, আহত হয়েছেন আশি জনের বেশি মানুষ। এখনও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে বাঁশখালী ও চন্দনাইশ উপজেলা।
দুই উপজেলার গ্রামে গ্রামে বিপুল সংখ্যক গাছপালা, কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। রাস্তায় গাছ উপড়ে পরে চট্টগ্রামের সঙ্গে এসব উপজেলার সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন প্রায়।
বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বুধববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। প্রাথমিকভাবে পাওয়া খবরে সরল ইউনিয়নে একজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন প্রায় ৮৫ জন, উপজেলায় বিদ্যুৎ নাই। বিভিন্ন রাস্তায় গাছ পড়ে সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি।”
এ উপজেলায় নিহত ওই নারীর নাম মমতাজ বেগম, বয়স ৭০ বছর। তিনি সরল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে ঝড় শুরুর পর রাস্তাঘাটের ওপরে গাছপালা ভেঙে পড়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, “রাস্তা থেকে ভেঙে পড়া গাছপালা সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যান চলাচল স্বাভাবিক করার।“
আরেকজন মারা গেছেন সাতকানিয়া উপজেলায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঝড়ের মধ্যে গাছ চাপা পড়ে বকুমা খাতুন নামের ৬৫ বছর বয়সী ওই নারীর মৃত্যু হয়।
“উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে অনেক গাছপালা ভেঙেছে। গাছ ও ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়েছে। ১২৩টি ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য এসেছে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় হামুন। মূলত কক্সবাজার এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে রাত ১টার দিকে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয় ওই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র।
ঝড়ের তাণ্ডবে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীতে মাটির দেওয়াল চাপায় একজন এবং মহেশখালী উপজেলায় গাছচাপায় একজনের মৃত্যুর খবর আসে রাতেই। এছাড়া দেয়াল চাপা ও গাছপালা পড়ে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ঝড় শুরুর পর বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায় মঙ্গলবার রাতে।
ঝড় কমে এলে সকালে কয়েক উপজেলায় বিদ্যুৎ ফিরলেও বাঁশখালী ও চন্দনাইশ উপজেলা এখনও বিদ্যুৎহীন বলে জানান চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জ্যেষ্ঠ মহা ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। আবার অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে এবং ভেঙে গেছে। বোয়ালখালী ছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবকটি উপজেলায় ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
“তবে বেশি ক্ষয়-ক্ষতির তথ্য পেয়েছি বাঁশখালী উপজেলায়। আর বাঁশখালী ও চন্দনাইশে বিদ্যুৎ পুরোপুরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।“
দক্ষিণ চট্টগ্রাম এলাকায় কমপক্ষে ৮১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে প্রকৌশলী দিলীপ বলেন, “সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঁশখালীতে। বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়েছে, তাই সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে আমাদের কর্মীরা মুভমেন্ট করতে পারছে না।“
সাতকানিয়া উপজেলায়ও বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি হয়েছে, তবে সেখানে ‘সোর্স লাইন’ চালু করা হয়েছে বলে জানান দিলীপ। এ উপেজলায় বিদ্যুৎ সেবা সম্পূর্ণভাবে চালু করতে আরো সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের এই কর্মকর্তা।
চট্টগ্রামে জেলা ও ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়-ক্ষতির খবর শুনলেও বিস্তারিত তথ্য এখনও পাননি তারা।
“বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে আমাদের তথ্য পেতেও সমস্যা হচ্ছে,“ বলেন তিনি