চট্টগ্রামে ৭ মাসে অবৈধভাবে ‘পাঁচ হাজার‘ জন্ম নিবন্ধন

এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2023, 01:44 PM
Updated : 24 Jan 2023, 01:44 PM

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবৈধভাবে জন্ম নিবন্ধনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, গত সাত মাসে চক্রটি প্রায় পাঁচ হাজার জন্ম নিবন্ধন করিয়ে দিয়েছে; আর প্রতিটির জন্য তারা নিয়েছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।

নগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সোমবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ওই চারজনকে আটক করে। পরে খুলশী থানার এ সংক্রান্ত মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. মোস্তাকিম (২২), দোলোয়ার হোসাইন সাইমন (২৩) ও আব্দুর রহমান ওরফে আরিফ। মঙ্গলবার তারা আদালতে জবানবন্দিও দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠায় আদালত। এছাড়া গ্রেপ্তার ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে সংশোধানাগারে পাঠানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ড কার্যালয়ে অবৈধভাবে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য মেলার পর পুলিশ ‘সাইবার পেট্রোলিংয়ের’ মাধ্যমে নজরদারি শুরু করেছে।

Also Read: চসিক: সার্ভারে ‘অনুপ্রবেশ করে’ ২০৬টি জন্মনিবন্ধন করল কে?

Also Read: চসিক: শোরগোলের মধ্যেই অবৈধভাবে আরও ৩৪১ জন্মনিবন্ধন

তবে সার্ভার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এসব জন্ম নিবন্ধন হয়েছে কি না, সেটা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপকমিশনার মঞ্জুর মোর্শেদ।

তিনি বলেন, চক্রটি কোনোভাবে পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে অবৈধভাবে কাজটি করছে, নাকি অন্য কোনোভাবে, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

“এর সঙ্গে কয়েকটি চক্র জড়িত। যাদের ধরা হয়েছে, তারা ‘মাঠ পর্যায়ের’ তথ্য সংগ্রহকারী। মূলত যাদের জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন, সে ধরনের লোকজন খুঁজে বের করে তারা তথ্য সংগ্রহ করেন। তাদের উপরে আরেকটি গ্রুপ আছে। তারা বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে তাদের চক্রের অন্যদের কাছে পাঠান। সেখান থেকেই তারা সার্ভারে ইনপুট করে।”

প্রতিটি জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য তারা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা করে নিত জানিয়ে উপকমিশনার মঞ্জুর বলেন, “তারা গত সাত মাসে প্রায় পাঁচ হাজার জন্ম নিবন্ধন করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রের সদস্যরা তিনটি উপায়ে লোকজন সংগ্রহ করত জন্ম নিবন্ধনের জন্য।

“একটি উপায় ফেইসবুকে বিভিন্ন ধরনের গ্রুপ করে, আরেকটি উপায় সরাসরি লোকজনের সঙ্গে কথা বলে; এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের আশপাশে থাকা কম্পিউটার দোকানগুলোর মাধ্যমে লোকজন সংগ্রহ করত তারা।

“এরকম আরও বেশ কয়েকটি চক্র সারাদেশে সক্রিয় আছে। প্রতিটি গ্রুপে ৩০-১০০ জন করে সদস্য আছে। জন্মনিবন্ধন করতে আগ্রহীদের তথ্য সংগ্রহ করে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বিস্তারিত পাঠিয়ে দেয় তাদের উপরে থাকা লোকজনদের। তারাই মূলত সার্ভারে তথ্য ইনপুট করে।”

গত ৮ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটির ৩৮, ১১, ১৩, ৩২ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে অবৈধভাবে অতিরিক্ত জন্মনিবন্ধনের ঘটনা ধরা পড়ে।

এরমধ্যে ১০, ১৮ ও ২২ জানুয়ারি তিন দিনে শুধু ১১ নম্বর ওয়ার্ডে অবৈধভাবে ৪০৯টি জন্মনিবন্ধন করা হয়।

ওই ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন থানায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের পক্ষে জিডি করা হয়; আর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ঘটনায় খুলশী থানায় সোমবার একটি মামলা হয়।

এসব জিডির অনুসন্ধানে নেমেই চারজনকে আটক করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। জিজ্ঞাসাবাদে সম্পৃক্ততা পেয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

অবৈধভাবে করা এসব জন্ম নিবন্ধন রোহিঙ্গাদের নামেও হয়েছে কি না সেটা তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন কমিশনার কৃষ্ণপদ।

তিনি বলেন, “যাদের নামে এসব জন্ম নিবন্ধন হয়েছে, তাদের বেশির ভাগের ঠিকানা ভুল। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এনআইডি ও পাসপোর্টের ক্ষেত্রে যেভাবে রোহিঙ্গা পাওয়া গিয়েছিল, এখানেও এ ধরনের আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন জানান, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সনদের নামে বেশকিছু ফেইসবুক গ্রুপ আছে। সেগুলোতে কেউ নক করলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে তারা তথ্য নিয়ে জন্মনিবন্ধন করে।

গ্রেপ্তার চারজন একই চক্রের সদস্য জানিয়ে তিনি বলেন, ১৬ বছর বয়সী কিশোর জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে চক্রটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পরে সে তার দুলাভাই মোস্তাকিমকেও এতে যুক্ত করে। আর গ্রেপ্তার সাইমন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও আরিফ একটি দোকান পরিচালনা করেন।

আসিফ মহিউদ্দিন জানান, চক্রটি হোয়াটসঅ্যাপে ‘বিজনেস গ্রুপ’ পরিচালনা করে যোগাযোগ করে থাকে। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে জব্দ করা কম্পিউটার ও মোবাইলে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তাদের ‘উপরে’ যে ব্যক্তি আছে, তাদের তারা চেনেন না বলে দাবি করেছেন, যিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন ‘হ্যাকার’ হিসেবে।

ঘটনাটি সাত মাস আগে শুরু হলেও ১৫ দিন আগে কেন বিষয়টি নজরে এল- এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, “এটি তদন্তের বিষয়। আমরা বেশ কয়েকজনকে মামলাটির বিষয়ে কথা বলার জন্য ডেকেছি।”