মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পোশাক জটিলতা, ফের বদলাতে হবে রঙ

প্রায় সাড়ে তিন মাস নতুন পোশাকে দায়িত্ব পালনের পর এ নির্দেশনা এল।

উত্তম সেন গুপ্তচট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2023, 01:16 PM
Updated : 17 March 2023, 01:16 PM

রঙ নিয়ে জটিলতায় নতুন পোশাক তৈরির স্বল্প সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো পোশাক পাল্টানোর মুখে পড়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর; আপত্তি এসেছে অন্য বাহিনী থেকে।

সাড়ে তিন মাস আগেও একবার বাহিনীটির পোশাকের রঙ বদলাতে বলা হয়েছিল। পরে আলোচনা শেষে আর পোশাক পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়নি। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পুনরায় রঙ বদলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অন্য বাহিনীর পোশাকের রঙের সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রঙ মিলে যাওয়াই এর কারণ বলে সবশেষ আদেশে বলা হয়েছে।

বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পোশাকের রঙ বদলাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তবে নতুন আদেশের বিষয়টি এখনও জানেন না বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, যদি মন্ত্রণালয় থেকে কিছু বলে সেক্ষেত্রে তারা দেখবেন। যে পোশাক এখন আছে সেটি চলছে।

অন্য বাহিনীর সঙ্গে রঙের মিল থাকায় আগেও একবার নতুন পোশাক তৈরির সিদ্ধান্ত আটকে ছিল।

পোশাক নিয়ে সবশেষ আদেশটিতে সই করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব জাহিদুল ইসলাম।

আদেশে বলা হয়েছে, “অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে কিছুটা মিল হওয়ায় অধিদপ্তরের পোশাকের রঙ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয়েছে।”

ভিন্ন রঙে পোশাক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে এতে।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াহাব ভূঞার সঙ্গে টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি।

২০১৪ সাল অধিদপ্তরের সিপাহী থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খাকি রঙের ইউনিফর্ম পরিধান করতেন। তখন পোশাকের এ রঙ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ থাকায় তা পরিবর্তনের আলোচনা তৈরি হয়।

এরপর ২০২১ সালের ২৩ মে নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘টার্কিশ ব্লু’ রঙের পোশাক নির্ধারণ করা হয়। যেখানে অন্যান্য বাহিনীর মতো অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক পর্যন্ত সবাইকে একই রঙের পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছিল।

এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২১ জুলাই অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন পোশাক ব্যবহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তখন পোশাক তৈরির পর একটি সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের ইউনিফর্মের সঙ্গে অধিদপ্তরের নতুন ইউনিফর্মের ‘রঙের মিল’ আছে বলে আপত্তি তোলা হয়।

ফলে অগাস্টের শেষ দিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে ‘মৌখিক নির্দেশনায়’ পোশাক পরিধানের বিষয়টি স্থগিত রাখতে বলা হয়।

আপত্তির পর ২৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দুই পোশাকের রঙ নিয়ে আলোচনায় ওই আপত্তি টেকেনি। এরপর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম শেষে ১ নভেম্বর পোশাক পরিধানের লিখিত আদেশ আসে মন্ত্রণালয় থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পোশাক নিয়ে একবার আপত্তি তোলা হয়েছিল একটি সংস্থার পক্ষ থেকে। সে আপত্তি না টেকায় অধিদপ্তরের সদস্যদের পোশাক পরিধানের অনুমতি দেয় মন্ত্রণালয়।

তিনি মনে করেন, পোশাক পেয়ে তাদের সদস্যরা ‘মেন্টালি বুস্ট আপ’ হয়েছেন। আবার নতুন নির্দেশনাটির কারণে তাদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

এ কর্মকর্তা বলেন, “এবার কাদের আপত্তির কারণে পোশাকের রঙ পরিবর্তনের আদেশ এসেছে এটা আমাদের নলেজে নেই। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।”

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মচারীদের (পোশাক সামগ্রী প্রাধিকার) বিধিমালা- ২০২১ নামে ওই বছরে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অতিরিক্ত পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, প্রসিকিউটর, পরিদর্শক, সহকারী প্রসিকিউটর ও উপপরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শক, সিপাহী, ওয়ারলেস অপারেটর ও গাড়িচালক পর্যন্ত সবাইকে পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়।

বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়, টার্কিশ ব্লু রঙের সেলুলার কাপড়ের বুকখোলা ফুল ও হাফহাতা শার্ট, ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট এবং অধিদপ্তরের লোগো সম্বলিত টুপি পরিধান করবেন কর্মকর্তারা।

নারীরা পরবেন টার্কিশ ব্লু রঙের বুশ শার্ট ও ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট।

এছাড়া অতিরিক্ত পরিচালক থেকে উপসহকারী পরিদর্শক পর্যন্ত সবার র‌্যাঙ্ক-ব্যাজ থাকবে।

তবে মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরিচালকরা এ পোশাক পরিধান করবেন না।

এর কারণ জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত পরিচালক পর্যন্ত বিভাগীয় লোকজন দায়িত্ব পালন করলেও পরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও মহাপরিচালকরা আসেন বিসিএস অ্যাডমিন ও পুলিশ সার্ভিস থেকে।

পরিচালক (অপারেশন) পদে পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং অন্য তিনটি পরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও মহাপরিচালক পদে প্রশাসন পদের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকেন।

পুরনো খবর

Also Read: নতুন পোশাকে মাঠে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা

Also Read: মাদক নিয়ন্ত্রণ বাহিনীর নতুন পোশাক কবে?

Also Read: নতুন পোশাকে মাঠে নামবে মাদক নিয়ন্ত্রণের বাহিনী