মাদক নিয়ন্ত্রণ বাহিনীর নতুন পোশাক কবে?

“যে রঙের পোশাক তৈরি করতে বলা হচ্ছে, তা অন্য একটি বাহিনীর পোশাকের সঙ্গে কিছুটা মিলে যাচ্ছে” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

কামাল তালুকদারউত্তম সেন গুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2022, 08:22 AM
Updated : 16 Sept 2022, 08:22 AM

সেপ্টেম্বরের শুরুতেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের নতুন পোশাকে মাঠে নামার কথা থাকলেও ‘মৌখিক’ নির্দেশনায় আটকে গেছে এর বাস্তবায়ন।

 এক বছর আগে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে কাপড় বিতরণ থেকে শুরু করে পোশাক তৈরির কাজও সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

 গত বছরের ২৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের জন্য পদবী অনুসারে ব্যাজ নির্ধারণ করে ‘পোশাক সামগ্রী প্রাধিকার বিধিমালা-২০২১’ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।

যেখানে শার্টের রঙ নির্ধারণ করা হয় ‘টার্কিশ ব্লু’ আর প্যান্ট ‘ডিপ নেভি ব্লু’। সঙ্গে অধিদপ্তরের লোগো সম্বলিত টুপি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রোর উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পোশাকের রঙ উল্লেখ করে অধিদপ্তর থেকে স্থানীয় পর্যায়ে পোশাক তৈরি করতে বলা হয়।

সারাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সম্ভবত সারাদেশে সব সদস্যরা পোশাক তৈরি করেছেন। এখন পরার অপেক্ষায়…”

উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, “কোন দিন থেকে পোশাক পরিধান শুরু হবে, সেটা ওপর থেকে নির্দেশনা আসতে হবে। নির্দেশনা আসলেই পোশাক পরিধান শুরু করবে সবাই।

গত ২১ জুলাই অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন পোশাক চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত জানায়।

কিন্তু অগাস্টের শেষ দিকে ‘মৌখিক নির্দেশনায়’ পোশাক পরিধানের বিষয়টি স্থগিত রাখতে বলা হয় বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানদের। এতে অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের অভিযোগ, অনেকেই চান না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পূর্ণাঙ্গ বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠুক। তাদের কারণেই পোশাক পরিধানে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের পোশাক থাকবে।

 তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তবে এখন দেখা যাচ্ছে, যে রঙের পোশাক তৈরি করতে বলা হচ্ছে, তা অন্য একটি বাহিনীর পোশাকের সঙ্গে কিছুটা মিলে যাচ্ছে।”

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পোশাকের রঙ পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

 ২০১৪ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে অধিদপ্তরের সিপাহী থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খাকি রঙের পোশাক পরতেন। তবে রঙ নিয়ে বাহিনীর সদস্যদের ‘আপত্তি’ ছিল।এর সাত বছর পর নতুন পোশাক বিধি জারি করা হয়।

 মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মচারীদের (পোশাক সামগ্রী প্রাধিকার) বিধিমালা-২০২১ নামে গত বছর জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী- অতিরিক্ত পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, প্রসিকিউটর, পরিদর্শক, সহকারী প্রসিকিউটর ও উপ- পরিদর্শক, সহকারী উপ-পরিদর্শক, সিপাহী, ওয়ারলেস অপারেটর ও গাড়ি চালক পর্যন্ত সকলের পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বিধিমালায় বলা হয়, ‘টার্কিশ ব্লু’ রঙের সেলুলার কাপড়ের বুকখোলা ফুল ও হাফহাতা শার্ট, ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট এবং অধিদপ্তরের লোগো সম্বলিত টুপি পরবেন কর্মকর্তারা।

আর নারী সদস্যরা ‘টার্কিশ ব্লু’ রঙের বুশ শার্ট ও ডিপ ‘নেভি ব্লু’ রঙের প্যান্ট পরবেন।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অতিরিক্ত পরিচালকদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজে থাকবে একটি শাপলার সঙ্গে অ্যালমুনিয়ামের তৈরি শাপলা সম্বলিত চারকোণা বিশিষ্ট দুইটি পিপস ও কলার রিবন।

উপ-পরিচালকদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজ হবে এক শাপলার। তবে ওই পদে চাকরির বয়স চার বছর পূর্ণ হলে শাপলার সঙ্গে অ্যালমুনিয়ামের তৈরি শাপলা সম্বলিত চার কোণা একটি পিপস যুক্ত হবে।

সহকারী পরিচালকদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজ হবে অ্যালমুনিয়ামের তৈরি শাপলা সম্বলিত চার কোণা দু’টি পিপস। চাকরির বয়স চার বছর অতিক্রম করলে সেক্ষেত্রে আরেকটি পিপস যুক্ত হবে।

পরিদর্শক ও প্রসিকিউটেরর র‌্যাঙ্ক ব্যাজে থাকবে অ্যালমুনিয়ামের তৈরি শাপলা সম্বলিত চার কোণা একটি পিপস।

সহকারী পরিদর্শক ও প্রসিকিউটেরর র‌্যাঙ্ক ব্যাজে চার ডানাযুক্ত দু’টি এবং উপ-সহকারী পরিদর্শকের ব্যাজে থাকবে একটি স্টার এবং কালো রঙের রিবন।

নতুন প্রজ্ঞাপনে সিপাহী থেকে অতিরিক্ত পরিচালক পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পোশাকের বিধান করা হলেও মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরিচালকের পোশাক পরিধান নিয়ে কিছুর উল্লেখ নেই।

মাদক নিয়ন্ত্রণ বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জাতিসংঘের ইউএনওডিসি’র (ইউনাইটেড ন্যাশনস অন ড্রাগ অ্যান্ড ক্রাইম) সদস্য।

দেশের মাদক সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরই তাদের অবহিত করতে পারে। মাদক নির্মূলের জন্য অধিদপ্তরের সদস্যদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করে ইউএনওডিসি।

তাদের অভিযোগ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দেশের আইন প্রয়োগকারী একটি সংস্থা। পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো তারা অর্থপাচার এবং মাদক সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার সরাসরি তদন্ত করতে পারে।

কিন্তু তাদের ‘ঢাল তলোয়ার বিহীন’ বাহিনী করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ কর্মকর্তাদের।

আরও খবর

Also Read: নতুন পোশাকে মাঠে নামবে মাদক নিয়ন্ত্রণের বাহিনী