চট্টগ্রাম সিটিতে ‘গলাকাটা’ গৃহকর প্রত্যাহার দাবি, আন্দোলনের ‘হুমকি’

“এক পশলা বৃষ্টি হলে এক হাঁটু পানি হয়। কী সেবা দেন যে, ভাড়ার ওপর ইনকাম ট্রাক্স দেবার পর আবার ট্যাক্স দিতে হবে?” সমাবেশে বলেন সাবেক এক কাউন্সিলর।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2022, 02:20 PM
Updated : 2 Sept 2022, 02:20 PM

‘গলাটাকা’ গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) প্রত্যাহার করা না হলে মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ; যারা ছয় বছর আগে একই দাবিতে আন্দোলনে নেমে সফলও হয়েছিল।

শুক্রবার বিকালে নগরীর কদমতলী দস্তগীর সুপার মার্কেটের সামনে জনসভা থেকে এ দাবি জানানো হয়।

পরিষদের নেতারা হোল্ডিং ট্যাক্স ‘কমাতে’ আপিল না করতেও নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তারা অভিযোগ করেন, আপিলের মাধ্যমে গৃহকর ‘কমিয়ে’ দেওয়ার কথা বলে সিটি করপোরেশনের কর মূল্যায়নকারীরা ঘুষ দাবি করছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের ওপর চার বছর আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করে। এরপর ওই মাসেই তা প্রত্যাহার করে নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি ‘ভাড়ার ভিত্তিতে’ বর্ধিত নতুন হারে কর আদায়ে সিটি করপোরেশন তৎপর হলে গত মাসখানেক ধরে স্থানীয় পর্যায়ে জনসংযোগ শুরু করে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। এরপর শুক্রবার জনসভা থেকে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হল।

পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, “বর্তমান মেয়র নির্বাচনের আগে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করতে আমার বাড়িতে আসেন। সেদিন উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি হোল্ডিং ট্যাক্সে হাতে দিবেন কি না?

“জবাবে তিনি বলেছিলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী আমার নেতা। তিনি যেখানে হাত দেননি সেখানে হাত দিয়ে কী আমার নেতাকে অসম্মান করব। চেয়ারে বসেই উনি সব ভুলে গেছেন। আমরা উনাকে শ্রদ্ধা সম্মান করি। শহরে সবাই আপনার আত্মীয়-স্বজন। আমাদের উপর করের বোঝা চাপাবেন না।”

আপিলের নামে প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘ঘুষ দাবি’ করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বলছে টাকা দিলে দুই দিনে গৃহকর কমিয়ে সব ঠিক করে দিবে। মেয়র সাহেব আপনাকে মেয়র করে কী আমরা অপরাধ করেছি?”

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমির উদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রামের মানুষ বাড়ি ভাড়ার উপর ইনকাম ট্র্যাক্স দেয়। আবার যদি বাড়ি ভাড়ার উপর গৃহকর দিতে হয় তাহলে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হতে হবে। প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন সেই রাস্তা খুলে দেন। এখন মেয়র রেজাউল একই পথ ধরেছেন।”

প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ‘দেনার বোঝা কমাতে’ চট্টগ্রামের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পুনর্মূল্যায়ন অনুসারে বর্ধিত গৃহকর আদায়ের অনুমতি চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন সুজন। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নতুন হারে গৃহকর আদায়ের অনুমতি দেয়।

সভায় আমির উদ্দিন বলেন, “অন্যায্য এক টাকা বাড়তি গৃহকরও চট্টগ্রামের মানুষ দেবে না। এই ট্যাক্স আমরা নিতে দেব না। বৃহত্তর আন্দোলন হবে।

সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি বলেন, “এক পশলা বৃষ্টি হলে এক হাঁটু পানি হয়। কী সেবা দেন যে, ভাড়ার ওপর ইনকাম ট্রাক্স দেবার পর আবার ট্যাক্স দিতে হবে?”

আরেক সাবেক কাউন্সিলর এম এ মালেক বলেন, “আপনারা নগরবাসীর কাছ থেকে ৮০০ কোটি টাকা ট্যাক্স নিতে চান। অথচ বহুগুণ বেশি সরকারি বরাদ্দ এখন পান। বন্দর, কাস্টমস, রেলসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয় ট্যাক্স নিন। সাধারণ মানুষের থেকে নয়।”

সাজ্জাদ হোসেন জাফরের সঞ্চালনায় সভায় পরিষদের মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী, শ্রমিক নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম, হাজী নুরুল ইসলাম, হারুনুর রশিদ ও হাসান ইমরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, ইসমাইল মনু, মো. আনোয়ার, মুজিবুল হক চুন্নু, বিশুময় দেব বক্তব্য রাখেন। সভা শেষে একটি মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সিটি করপোরেশনের (কর) বিধি অনুযায়ী পাঁচ বছর পরপর কায়িক অনুসন্ধানের মাধ্যমে গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের এখতিয়ার অনুসারে ২০১৬-১৭ সালে চট্টগ্রাম সিটি গৃহকর-পুনর্মূল্যায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করে।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদে ওই মূল্যায়ন শেষে ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮টি সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন স্থাপনা নির্ধারণ হয়, যা আগের মূল্যায়নের হোল্ডিং এর চেয়ে ২৮ হাজার ৭০২টি বেশি।

এসব স্থাপনার বিপরীতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৫১ কোটি টাকা গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছিল।

তখন এর বিরোধীতায় করদাতা সুরক্ষা পরিষদ আন্দোলনে নামলে তাতে সমর্থন দেন প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমসহ চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা।

আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ তা স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়েছিল।

আরও পড়ুন:

Also Read: গৃহকর বাড়ানোর সুযোগ পেল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

Also Read: চট্টগ্রামে ফের আলোচনায় ‘হোল্ডিং ট্যাক্স’

Also Read: গৃহকরের হার নয় আদায়ের পরিধি বাড়াতে চান রেজাউল

Also Read: সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বর্ধিত ‘হোল্ডিং ট্যাক্স’ চান সুজন

Also Read: হোল্ডিং ট্যাক্সের পুরনো হার বহালের দাবি চট্টগ্রামে

Also Read: কর বৃদ্ধি: নাছিরকে মহিউদ্দিনের চিঠি

Also Read: হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর বিপক্ষে চট্টগ্রাম আ. লীগ

Also Read: চট্টগ্রামে হোল্ডিং ট্যাক্স কমাতে বাড়িওয়ালাদের কর্মসূচি