গৃহকরের হার নয় আদায়ের পরিধি বাড়াতে চান রেজাউল

গৃহকরের হার না বাড়িয়ে কর আদায়ের পরিধি বিস্তৃত করতে চান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2021, 03:39 PM
Updated : 24 June 2021, 03:39 PM

বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সিসিসির পঞ্চম সাধারণ সভায় এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

কর পুনর্মূল্যায়ন কাজের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার অথবা নতুন পুনর্মূল্যায়নের অনুমতি চেয়ে গত ৬ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় সিসিসি।

সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদের স্থাপনার আয়তনের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করার পরিবর্তে ভাড়ার ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়, যাতে হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

তখন নগর আওয়ামী লীগ নেতা তিনবারের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার অনুসারীরা এবং করদাতা সুরক্ষা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনে নামে। পরে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সময়ে সরকারি স্থাপনায় পুনর্মূল্যায়নের উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

সবশেষ বর্তমান মেয়র রেজাউল চলতি মাসে বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থাপনার ক্ষেত্রেও পুনর্মূল্যায়নের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চান। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বৃহস্পতিবারের সভায় মেয়র রেজাউল বলেন, “নতুনভাবে করহার বৃদ্ধি হবে না। কর আদায়ের আওতা ও পরিধি বাড়ানো হবে। কোনো ভবন যদি দুই তলা থাকা অবস্থায় যে কর দিত এখন যদি তিন তলা, চার তলা বা বহুতল হয়ে যায় তা হলে বর্ধিত অংশের জন্য কর ধার্য কোনোভাবে অযৌক্তিক হয় না।

“সিসিসিকে নগরবাসীর কর দিয়ে চলতে হয় কিন্তু এই আয় দিয়ে সেবার পরিধি বাড়ানো কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই নিজস্ব ভূ-সম্পত্তিতে আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোন এলাকায় কি ধরণের আয়বর্ধক প্রকল্প করা যায় সে-জন্য কাউন্সিলরদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হবে।”

সিসিসির অব্যবহৃত জমিতে একাধিক বিনিয়োগ প্রস্তাবনা এসেছে বলে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, “এসব প্রস্তাবনা যথাযথ কিনা তা বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে যাচাই-বাচাই করে সুনির্দ্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি দেওয়া হবে।”

‘জলাবদ্ধতার দায় সিডিএর’

চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে নগরীতে সৃষ্ট জলজটে নগরবাসীর দুর্ভোগে উদ্বেগ প্রকাশ করে সভায় মেয়র রেজাউল বলেন, “এর দায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) নিতে হবে। কারণ পুরো প্রকল্পটি তাদের হাতে এবং বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে।

“আমরা সিডিএ কে অনুরোধ করেছিলাম, বর্ষার আগেই খালগুলোর যে অংশে বাধ দিয়ে পানি প্রবাহ পথ অটকানো হয়েছে তা অপসারণ করা হোক। কিন্তু কথা দিয়েও সিডিএ কর্তৃপক্ষ কথা রাখেনি।”

বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এর পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশ ব্রিগেড।

সভায় মেয়র বলেন, “সিডিএ খালের দুপাশের যে অংশে রিটেইনিং ওয়াল তুলেছে সেখানে খালের মাঝেই মাটির স্তুপ করেছে এবং এই মাটি না সরিয়ে দিয়ে স্কেভেটর দিয়ে সমান করায় খালের মধ্যে রাস্তা হয়ে গেছে।

“সিডিএ বলেছে তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু প্রকল্পই যখন বাস্তবায়ন হয়নি তখন ব্যবস্থাপনার কথা আসে কেন? সম্পূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বুঝিয়ে না দেয়ার আগে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে পারি না।”

রেজাউল বলেন, প্রকল্প মেয়াদ আরো বাড়ানো হলেও এই সময় নগরীকে জলজট থেকে মুক্ত করার কোন পথ সিডিএ করছে কি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। পরিবহণ সেক্টর ও যোগাযোগ অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন না হলে মেগা প্রকল্পগুলোর সুফল পাওয়া যাবে না।

“নগরীতে মেট্রোরেল ও মনোরেল করার প্রস্তাব এসেছে। মেট্রোরেলের ব্যাপারে একটা জরীপ আমাদের আছে, কিন্তু মনোরেলের ব্যাপারে কোন ধারণা নেই। মনোরেলের প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এটা সত্য যে, একটি আধুনিক শহরের জন্য দু’টি রেল সিস্টেম খুবই কার্যকর।”

নালা-নর্দমা থেকে মাটি উত্তোলন ও তা সরিয়ে ফেলতে প্রত্যেক ওয়ার্ডে কাউন্সিলরকে ৮ লক্ষ টাকা করে মোট ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান মেয়র।

সিসিসি’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী, মো. সাহেদ ইকবাল বাবু, মোহাম্মদ ইসমাইল, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, নাজমুল হক ডিউক, ড. নিছার আহমদ মঞ্জু, মো. মোবরক আলী, আবদুল বারেক প্রমুখ।