হোল্ডিং ট্যাক্স ‘না বাড়াতে’ অনুরোধ জানিয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।
Published : 03 Oct 2017, 12:51 PM
সোমবার রাতে নগরীর চশমা হিলে নগর কমিটির সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় নগর আওয়ামী লীগের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই ‘জরুরি সভায়’ নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন না।
মেয়রের পাশাপাশি নগরীর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংকট, বেহাল সড়ক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে যথাক্রমে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল), পিডিবি, ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং নগর পুলিশের কমিশনারকেও চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই সভায়।
হোল্ডিং ট্যাক্সের পুরনো হাল বহালের দাবি জানিয়ে ‘করদাতা সুরক্ষা পরিষদের’ সমাবেশ থেকে মেয়রকে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেওয়ার তিন দিনের মাথায় নগর আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিল।
সোমবার রাতের সভায় উপস্থিত ছিলেন নগর কমিটির সহ-সভাপতি সুনীল সরকার, খোরশেদ আলম সুজন ও জহিরুল আলম দোভাষ, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান ও নোমান আল মাহমুদ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, হাসান মাহমুদ শমসের ও আবু তাহের ও উপ-দপ্তর সম্পাদক জহর লাল হাজারী।
সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তে শহর উতপ্ত। মহল্লায় মহল্লায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
“আগের ধার্য হোল্ডিং ট্যাক্স বহাল রাখতে এবং ভাঙ্গা সড়ক দ্রুত মেরামত করতে চিঠি দিয়ে মেয়রকে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজকে চিঠি প্রস্তুত করে আগামীকাল (বুধবার) তা মেয়রের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।”
সোমবার রাতের সভায় মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা এই সমাজেই বাস করি। সমাজের মানুষের বাইরে আমরা নই। রাজনীতি করি বলেই আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না।
“যেহেতু মেয়র দলের তাই রিভিউ করতে অনুরোধ করতে পারি। এতে জনগণও দলের অবস্থান জানতে পারবে।”
সভায় উপস্থিত আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর বিষয়টি কি প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
“আমাদের তো মানুষের কাছে যেতে হবে ভোটের জন্য। বিভিন্ন মহল্লা থেকে লোকজন আমাদের কাছে আসছে। পথে-ঘাটে যেখানেই যাই মানুষ আমাদের বলছে। তাই দলের অবস্থান জানানোটাও জরুরী।”
সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে- বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে এবং সড়ক সংস্কার দ্রুত শেষ করতে সিডিএকে, অপর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের কারণে আবাসিক গ্রাহকদের ভোগান্তি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যঘাতের বিষয় উল্লেখ করে কেজিডিসিএলকে, পানির অপ্রতুলতা নিরসনে ওয়াসাকে, ঘনঘন লোডশেডিং ও লো ভোল্টেজ বন্ধে পিডিবিকে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও মাদক নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হবে।
খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চিঠিগুলো প্রস্তুত করে এসব সংস্থার পৌঁছে দেওয়া হবে। পরে দলের নেতারা একসাথে সংস্থার প্রধানদের সাথে দেখা করতে যাব।
২০১৬ সালের মার্চে ‘পঞ্চবার্ষিকী কর মূল্যায়ন কর্মসূচি’র মধ্য দিয়ে নতুন করে হোল্ডিং এর কর নির্ধারণ শুরু হয়। মূল্যায়ন শেষে গত ৩১ অগাস্ট তা প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে আপিল করতে যে সময় নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) তা আজ (মঙ্গলবার) শেষ হচ্ছে। আপিলের সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়াতে চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে সিসিসি।
নতুন কর মূল্যায়নের পর থেকেই নগরবাসী অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন।
পাশাপাশি করদাতা সুরক্ষা পরিষদ নতুন পদ্ধতিতে ভাড়ার ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিবর্তে আগের নিয়মে স্থাপনার আয়তন হিসেবে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ ও আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করছে।
অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারের সময় হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও পুর্নম্যূলায়ন শুরুর সময় থেকে মেয়র নাছির বলছেন- হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর এখতিয়ার সরকারের। তিনি কেবল মন্ত্রণালয়ের অধ্যাদেশ অনুসারে কর আদায়ের চেষ্টা করছেন।
নতুন কর হার
নতুন কর মূল্যায়নের আগে স্থাপনার আয়তনের (বর্গফুট) ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হতো।
সিসিসি নতুন করে যে ১৭ শতাংশ কর নির্ধারণ করেছে তার মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং বাবদ, ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন বাবাদ এবং আর্বজনা অপসারণের জন্য ৭ শতাংশ।
নতুন নিয়ম অনুসারে যে কোনো বহুতল স্থাপনার সবগুলো ফ্ল্যাটের মোট বার্ষিক ভাড়া থেকে দুই মাসের ভাড়া বাদ যাবে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হিসেবে।
ভবন মালিক যদি ঘর ভাড়া না দিয়ে শুধুমাত্র নিজেই বসবাস করেন সেক্ষেত্রে এথেকে আরও ৪০ শতাংশ ছাড় দেয়া হবে।
এরপর বার্ষিক ভাড়ার যে মোট অঙ্ক বাকি থাকবে তার উপর ১৭ শতাংশ কর দিতে হবে।
পুরনো নিয়মে গত অর্থ বছরে সিসিসি হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ আদায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যদিও ওই অর্থ বছরে আদায় হয়েছে ১০৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
এ বছর শেষ হওয়া কর পুর্নমূল্যায়ন অনুসারে নগরীতে মোট হোল্ডিং আছে এক লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮টি। যা আগের হোল্ডিং এর চেয়ে ২৮ হাজার ৭০২টি বেশি।
মূল্যায়নে নগরীর সব হোল্ডিং এর বিপরীতে চলতি অর্থ বছরে মোট ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।