আদালত আগামী ১৭ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছে।
Published : 26 Jun 2023, 10:03 PM
বাবুল আক্তার পুলিশ কর্মকর্তা থাকার সময় চট্টগ্রামে তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার।
বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যামামলায় আদালতে সাক্ষ্যে একথা সাক্ষী আবদুস সাত্তার, যিনি চট্টগ্রাম নগরীর ও আর নিজাম রোডে বাবুলের ভাড়া করা বাসার পাহারাদার ছিলেন।
এসপি বাবুল ঢাকায় বদলি হওয়ার পরপরই ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে সড়কে গুলি-চালিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয় মিতুকে।
চট্টগ্রামে এসপি বাবুলের ‘সোর্স’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন মুছা। মামলার তদন্তে উঠে এসেছে, বাবুল নিজের স্ত্রীকে খুনের পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুছাকে।
সোমবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন ৭০ বছর বয়সী সাত্তার।
তিনি বলেন, “বাবুল সাহেবের ছেলেকে প্রতিদিন সকালে স্কুলে নিয়ে যেত কনস্টেবল সাদ্দাম। ২০১৬ সালের ৫ জুন হঠাৎ সেদিন সাদ্দাম আসেনি।
“সেদিন বাবুল সাহেবের স্ত্রী সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাচ্চাকে নিয়ে রওনা দেন। এরপর আমি বাথরুমে যাই। সেখানে তখন আরেক দারোয়ান তারেক ছিল। বাথরুম থেকে ফিরে তারেককে বলি, তুমি গেটে থাকে, ১০ টাকার চা এনে আমরা দুজনে খাব।”
মিতু হত্যা: বাদী বাবুল আক্তার যেভাবে আসামি
বাবার সাক্ষ্যে মিতু হত্যা মামলার বিচার শুরু
মামলা করার এক সপ্তাহ আগে বাবুলের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ পান’ মিতুর বাবা
মিতু হত্যা: বাবুলের ‘বিদেশি বান্ধবীর ২৯ এসএমএস’ নিয়ে আসামিপক্ষের জেরা
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাত্তার বলেন, “তারেককে ১ নম্বর গেটে রেখে আমি চায়ের ফ্লাক্স নিয়ে রওনা দিই। বিল্ডিংয়ের শেষ মাথায় পৌঁছে দেখি ডান দিকে বেকারির সামনে ম্যাডাম পড়ে আছে রাস্তায়। পাশে বাচ্চা রাস্তায় দাঁড়াইয়ে কানতেছে আর চোখ মুছতেছে। তখন দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাকে নিয়ে আমি বিল্ডিংয়ে চলে আসি।
“এসে গেট থেকে ইন্টারকমে ফোন করে করে সব ফ্ল্যাটে জানিয়ে দিই- বাবুল সাহেবের বৌকে কারা যেন মেরে ফেলেছে। বাসার কাজের মেয়ে ফাতেমাকে ফোন করে বলি, তাড়াতাড়ি একটা চাদর নিয়ে আস। ফাতেমা দেরি করায় গিয়ে দেখি সে চাদর নিয়ে নামতেছে। তারপর গিয়ে ম্যাডামকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিই।”
ওই ভবনে চাকরি করার সময়ের কিছু তথ্য সাক্ষ্যতে জানান চাঁদপুরের মতলব থানার উত্তর দিঘলদি গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সাত্তার।
তিনি বলেন, “সেখানে চাকরি করার সময় ওই বাসায় মুছা নামে একজন লোক আসত। প্রথমে তাকে চিনতাম না। প্রথমদিন ইন্টারকমে ফোন করে ম্যাডামকে বলি।
“মুছা বাজার নিয়ে আসত। কখনও উপরে যেত। কখনও বাজার নিচে রেখে যেতে বলত ম্যাডাম। অনুমতি না নিয়ে তাকে কখনো উপরে যেতে দিইনি।”
ওই ফ্ল্যাটে বাবুল আক্তারের বাসার জন্য আলাদা একটি রেজিস্ট্রার খাতা রাখা হত জানিয়ে সাত্তার বলেন, “উনার বাসায় কোনো লোক আসলে সেটা এন্ট্রি করার জন্য আলাদা খাতা ছিল। ম্যাডাম মারা যাওয়ার ৩-৪ দিন আগে আমি বাথরুমে গেছি। এসে শুনি কয়েকজন লোক এসে তারেকের কাছ থেকে খাতা নিয়ে গেছে।”
সাক্ষ্যের পর জেরায় বাবুলের আইনজীবী কফিল উদ্দিন জানতে চান, ওই খাতাটি কত পাতার, সেখানে কত পৃষ্ঠা লেখা ছিল এবং সেখানে কার কার নাম ছিল?
জবাবে আবদুস সাত্তার বলেন, “কত পাতার খাতা বলতে পারব না। ২-৩ পৃষ্ঠা লেখা ছিল। ওই ৩ পৃষ্ঠায় মুছার নাম ছিল। বাবুল সাহেবের বাসায় মুছা ছাড়া আর কেউ আসত না।”
তিনি বলেন, “মুছা ঘটনার পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে সকাল ১০-১১ টার দিকে বাজার নিয়ে এসেছিল। মুছা ওদের কাজের লোক ছিলও কি না, সেটা আমি জানি না। বাজার করতে কে বলত, সেটাও জানি না।”
জেরার জবাবে সাত্তার জানান, ফ্ল্যাটটির মালিক সমিতির চেয়ারম্যান ওই আলাদা খাতা রাখার বিষয়টি জানতেন।
তিনি আরও বলেন, “বিল্ডিং ও এর আশেপাশ এবং রাস্তাঘাট সিসি ক্যামেরার আওতাধীন ছিল। যারাই ওখানে আসত, তাদের ছবি সিসি ক্যামেরায় উঠত।
“ঘটনার পর থেকে ওই বাসায় আমি থাকাকালীন আর পুলিশ আসেনি। আমি আড়াইমাসের মতো ছিলাম আরও। সকাল ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আমার ডিউটি ছিল। এর মধ্যে ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর আমাকে সাক্ষ্য দিতে আগ্রাবাদ ডিবি অফিসে চারদিন যেতে হয়েছে। তারা গাড়ি করে নিয়ে যেত, আবার দিয়ে যেত। পরে ম্যাজিস্ট্রেটকে সাক্ষ্য দিই। এরপর আমি গ্রামের বাড়িতে চলে যাই।”
জেরা শেষে আদালত আগামী ১৭ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছে।
স্ত্রী হত্যার পর বাবুল নিজে বাদী হয়ে মামলা করলেও তিনি নিজেই এখন আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
পুলিশের খাতায় মুছা পলাকত। তবে তার স্ত্রীর দাবি, মিতু হত্যার কিছু দিন পরই পুলিশ পরিচয়ে মুছাকে ধরে নেওয়া হয়, তারপর স্বামীর খোঁজ আর পাননি তিনি।