নির্মাণ কাজ শেষের প্রায় দেড় বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের (পিসিটি)।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি টার্মিনালটির উদ্বোধন এবং প্রস্তাবিত বে টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যানের মোড়ক উন্মোচন করবেন।
টার্মিনালটি পরিচালনায় শিগগির সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের সঙ্গে চুক্তি হবে। এটিই চট্টগ্রাম বন্দরের প্রথম কোনো টার্মিনাল যেটি কোনো বিদেশি অপারেটর পরিচালনা করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিসিটিতে অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।”
পিপিপি অ্যাক্ট অনুযায়ী জিটুজি পদ্ধতিতে চুক্তি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর এবং সৌদি রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের পক্ষ থেকে চুক্তি বিষয়ক সকল কার্যক্রম অনুমোদন হয়েছে। আমরা একমত হয়েছি। খুব ভালো একটি চুক্তি হবে। চুক্তি হলেই আপনারা শর্তগুলো জানতে পারবেন।”
সবকিছু মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে জানিয়ে সোহায়েল বলেন, “আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে এই চুক্তি হবে এবং ডিসেম্বর থেকে অপারেটর পিসিটি পরিচালনা করবে।”
২০০৭ সালে কাজ শুরু হওয়া এ কন্টেইনার টার্মিনালে চারটি জেটি রয়েছে। এর তিনটি কন্টেইনার জেটি এবং অপরটি ডলফিন জেটি। নতুন এ টার্মিনাল অপারেশনাল কার্যক্রমে এলে চট্টগ্রাম বন্দরে জেটির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২১টিতে।
মোহনার অদূরে নগরীর ড্রাইডক ও চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের মাঝামাঝি স্থানে কর্ণফুলী নদীর তীরে এক হাজার ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর।
৫৮৪ মিটার লম্বা তিনটি জেটিতে এক সঙ্গে তিনটি কন্টেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এছাড়া অপর জেটিতে তেল খালাসের জন্য অপর একটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে।
জেটিটি চালু হলে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে এবং কিছুটা বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। এ টার্মিনালে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব।
পিসিটিতে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফট এবং দুইশ মিটার লম্বার জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। বন্দরের অন্যান্য জেটিগুলোতে বর্তমানে সাড়ে নয় মিটার ড্রাফট এবং ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারে।
মোহাম্মদ সোহায়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিসিটি চালু হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি জাহাজের চাপও কমবে।
“ইতিমধ্যে আমরা ট্রায়াল ভিত্তিতে কিছু জাহাজ সেখানে বার্থিং দিয়েছি। উদ্বোধনের পর থেকে চুক্তির আগে পর্যন্ত আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাব। তবে পুরোদমে একটি টার্মিনাল চালাতে হলে অনেক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। সেগুলো অপারেটেরের সঙ্গে চুক্তির পর তারা ব্যবস্থা করবে।”
২০২২ সালের জুনে পিসিটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ওই বছরের ১৬ নভেম্বর মিয়ানমার থেকে ২ হাজার ৬০০ টন চাল নিয়ে আসা একটি জাহাজ প্রথম ভেড়ানো হয়।
প্রকল্পের পরিচালক চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই টার্মিনালে একসঙ্গে তিনটি কন্টেইনার জাহাজ ভিড়তে পারবে। গত বছর নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কয়েকটি জাহাজ এখানে ভিড়েছে। আমাদের সব কাজ এবং প্রস্তুতি শেষ।”
সৌদি আরবের জেদ্দাভিত্তিক কনটোইনার টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল।
২০২২ সালের অক্টোবরে জেদ্দায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে এক বৈঠকে রেড সি গেটওয়ের টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের পিসিটি পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল।
২০২১ সালের মার্চে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় পিসিটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়নে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়।
এরপর সরকারের পিপিপি অথরিটি এই টার্মিনালের অপারেটর নিয়োগের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনকে (আইএফসি) পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়।