“আজকে এই অবারিত সমুদ্রপথেই সমগ্র পৃথিবী এখানে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। আমাদের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করতে চাইছে।”
Published : 15 Oct 2023, 06:19 PM
সমুদ্রখাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, গোটা পৃথিবীই এখন দেশের এই খাতে বিনিয়োগ করতে চায়।
রোববার চট্টগ্রাম বন্দরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সমগ্র পৃথিবী নৌ পরিবহন খাতের ওপর এগিয়ে যাচ্ছে। আর সমগ্র পৃথিবী জয় করার একমাত্র জায়গা হচ্ছে মেরিটাইম। মেরিটাইমকে বাদ দিয়ে স্মার্ট বা উন্নত বাংলাদেশ সম্ভব নয়। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেরিটাইমের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য ব্যাপক জোর দিয়েছেন।
“একদম ম্যানপাওয়ার থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু। আমাদের সমুদ্র আজকে অবারিত। কোথাও কোনো বাধা নাই। এটা সম্ভব হয়েছে দেশরত্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আজকে এই অবারিত সমুদ্রপথেই সমগ্র পৃথিবী এখানে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। আমাদের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করতে চাইছে।”
চট্টগ্রাম বন্দরের বহরে নতুন সংযোজিত ২৪টি যন্ত্র উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নৌপ্রতিমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সক্ষমতা কোথায় গেছে, আমরা সমগ্র বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবী জেনেছে যে বাংলাদেশের সক্ষমতা কোথায় গেছে।
“আমরা মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর করছি। পায়রা পোর্ট করেছি। মোংলা পোর্ট আপগ্রেডেশন করছি আমরা। আমাদের বে টার্মিনালের কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের আপগ্রেডেশন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এই যে এ ধরনের ইক্যুইপমেন্ট দিয়ে যে পণ্য ওঠানামা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে আমাদের সক্ষমতা। এই সক্ষমতা আমরা আরও এগিয়ে নিতে চাই।”
মন্ত্রী বলেন, “দেশ-বিদেশ নয়, আমরা বিশ্বের সঙ্গে থাকতে চাই। বিশ্বের যে কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করে যদি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়, আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাব। এটাই হচ্ছে সরকারের নীতি।”
৯১৪ কোটি টাকার ১০৪টি যন্ত্রপাতি
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৯ সালে ১০৪টি নতুন যন্ত্রপাতি সংগ্রহে ৯১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর আওতায় ৩৯৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ২৪টি ইকুপমেন্ট রোববার যুক্ত হল চট্টগ্রাম বন্দরের বহরে, যেটি উদ্বোধন করেন নৌ প্রতিমন্ত্রী
এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে- ২৪৩ কোটি টাকা মূল্যের চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্র্যান, ৭০ কোটি টাকার ছয়টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্র্যান, চারটি রিচ স্টেকার, চারটি ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক, দুটি কন্টেইনার মুভার, দুটি ১০০ টনের মোবাইল ক্রেন ও দুটি ৫০ টনের মেবাইল ক্রেন মোট ২৪টি যন্ত্রপাতি। চীন, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স থেকে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয় ২০২১ থেকে চলতি বছরের মধ্যে।
এর মধ্যে দিয়ে বন্দরের কী গ্র্যান্টি ক্র্যানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৮টিতে। বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৩০টি বিভিন্ন ধরনের নতুন যন্ত্রপাতি আসবে চট্টগ্রাম বন্দরে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, “একটা বন্দরের যে কয়টি বিষয় মূল চালিকাশক্তি তার মধ্যে একটি যন্ত্রপাতি। সেটা যদি আধুনিক এবং সক্ষম যন্ত্রপাতি হয় তাহলে কিন্তু বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিং ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যায়। আজকে যেসব যন্ত্রপাতি সংযোজিত হচ্ছে সেগুলো অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি।
“এই যন্ত্রপাতি দিয়ে জাহাজ থেকে কন্টেইনার ওঠানামা করা এবং কন্টেইনারকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া এই বিষয়গুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এতে করে আমদানি রপ্তানির গতি বাড়বে। আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা লাভবান হবেন। এই নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দেশের যে রেভিনিউ আয়, অনেক বেড়ে যাবে।”
এর মাধ্যমে বন্দরে যন্ত্রপাতির সংকট থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সব ধরনের কার্গো হ্যান্ডেল করতে সক্ষম। সাথে সাথে অপরাটেরদের ট্রেনিং দিয়েছি। সুতরাং দক্ষ জনবলও থাকছে। সবকিছু বন্দরের যে সক্ষমতা সেটাকে বৃদ্ধি করবে।”
‘সুফল পাবে দেশবাসী’
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হলে নৌপরিবহন খাতে এর প্রভাব কেমন হতে পারে, তা জানতে চাওয়া হয় নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার ফলে। তারই একটা ফসল হচ্ছে এই কর্ণফুলী টানেল। এটা পদ্মা সেতুর মত করে আমাদের গর্বের এবং অহঙ্কারের জায়গা আরও বাড়িয়ে দেবে।
“এখন যেহেতু এটা চট্টগ্রামে, তাই চট্টগ্রামের এপার থেকে চট্টগ্রামের ব্যবসা ওপারে চলে যাবে। কাজেই এটার সুফল শুধু বন্দর কেন, সমগ্র দেশবাসী এটা ভোগ করবে।”
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটিতে) অপারেটর নিয়োগে ওপেন টেন্ডার বাতিলের বিষয়টি উল্লেখ করে জেটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে জানতে চান এক সাংবাদিক।
গ্লোবাল কোনো অপারেটরের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা বা অগ্রগতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কাছে অনেকগুলো প্রস্তাব আছে। পৃথিবীর রিনাউনন্ড যেসকল অপারেটর আছে, তারা আমাদের কাছে প্রপোজাল দিয়েছে এবং আমরা চট্টগ্রামের স্বার্থ, চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ, দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই আমরা তাদের সাথে এই কার্যক্রমে একত্রিত হব।”
পিসিটি চালু শিগগিরই
মোহনা থেকে একটু দূরেই নগরীর ড্রাইডক ও চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের মাঝামাঝি স্থানে কর্ণফুলী নদীর তীরে ১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এর অর্থায়ন করছে।
গত বছরের শেষ দিকে কাজ শেষ হলেও এটির অপারেশনাল কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।
২০০৭ সালে কাজ শুরু হওয়া পিসিটিতে চারটি জেটি রয়েছে। এর তিনটি কন্টেইনার জেটি এবং অপরটি ডলফিন জেটি। নতুন এ টার্মিনাল অপারেশনাল কার্যক্রমে এলে বন্দরে মূল জেটির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২১টিতে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “পিসিটিতে অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। শিগগিরই আপনারা সুসংবাদ পাবেন।”
যন্ত্রপাতি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানের আগে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, “আমরা আশা করছি খুব সম্ভবত আগামী মাসেই পিসিটি চালু হয়ে যাবে। পিসিটি কিন্তু এক ধরনের ট্রায়াল বেসিসে আমরা চালাচ্ছি। তবে পূর্ণ গতিতে যেতে হয়ত আরও দু-তিন মাস সময় লাগবে।
“পিসিটির জন্য বিদেশি অপারেটর আমরা দেখছি। কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। দেশি এবং বিদেশি যে কোনো অপারেটরকে আমরা ওয়েলকাম করি। আমরা একের পর এক টার্মিনাল করব। একের পর এক দেশি বিদেশি অপারেটরদেরকে খুঁজব। স্বাভাবিকভাবে যারা দক্ষ, যাদের অভিজ্ঞতা থাকবে, সক্ষমতা থাকবে তারাই টার্মিনালগুলো পরিচালনা করবে।”
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, “ইতোমধ্যে রেড সি গেটওয়ে নামের একটা সৌদি কোম্পানির সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। এটা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়ত তাদের সাথে আগামী মাসে বা পরের মাসে পিসিটিতে যৌথভাবে আমরা অপারেশনে যাব।”
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।