আবীরের বাসা থেকে উদ্ধার করা একটি ডায়েরিতে ‘বড় লোক হওয়ার ইচ্ছের’ কথা লেখা রয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
Published : 27 Nov 2022, 05:09 PM
চট্টগ্রামে ‘খুন হওয়া’ শিশু আয়াতের লাশের খণ্ডিত অংশের সন্ধানে দিনভর অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
রোববার দিনভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও কোনো অংশ মেলেনি; হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাটারটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার আবীরকে নিয়ে রোববার আকমল রোড পকেট বাজারে তার বাসার আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে ও আউটার রিং রোডের সমুদ্র এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
“সকালে আকমল আলী রোডের পকেট বাজার এলাকার তার মায়ের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে খাটের নিচ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাটারটি জব্দ করা হয়েছে।”
এদিনের অভিযানে আবীরের বাসা থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মনোজ দে।
তিনি বলেন, সেই ডায়েরিতে আবীরের ‘বড় লোক হওয়ার ইচ্ছের’ কথা লেখা আছে। ডায়েরিতে লেখা আছে- ‘আমার দরকার টাকা পয়সার, স্বপ্ন আমার বড় লোক হওয়ার।’
“প্রাথমিকভাবে ডায়েরিতে লেখাগুলো আবীরের হাতের লেখা মনে হচ্ছে। কিন্তু সেটা নিশ্চিত হতে এক্সপার্ট অপিনিয়ন প্রয়োজন।”
বিশেষ পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানার নেতেৃত্বে সংস্থাটির কয়েকজন পরিদর্শক ‘বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট ও মুখে মাস্ক লাগিয়ে আবীরকে’ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে লাশের খণ্ডিত অংশের খোঁজ করেন।
পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস খান জানান, আবীর যেসব স্থান দিয়ে সমুদ্র এলাকায় গিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। পকেট বাজার এলাকায় যে স্থানে শিশু আয়াতের পোশাক ফেলা হয়েছে সেসব স্থানে পুনরায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। এছাড়াও সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায়ও খণ্ডিত অংশের প্যাকেটগুলো খুঁজতে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত ১৪ নভেম্বর পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হওয়ার পর ইপিজেড থানায় জিডি করে তার পরিবার। সন্ধান চেয়ে পোস্টার ও প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। তার দাদা পিবিআইয়ের কাছে আবেদন করেন নাতনির সন্ধান চেয়ে।
পরে পিবিআই তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবীরকে আটক করে।
শুক্রবার পিবিআই জানিয়েছিল, ‘মুক্তিপণের’ জন্যই আয়াতকে অপহরণ করে খুন করেছে তাদের ভাড়াটিয়ার ১৯ বছরের ছেলে আবীর আলী। শিশুটিকে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে সে। ওই দিন তাকে নিয়ে পিবিআই সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি, আয়াতের জুতা উদ্ধার করে।
এদিকে আটকের পর আবীর পিবিআইকে জানায়, মুক্তিপণের জন্য সে আয়াতকে অপহরণ করে। কিন্তু অপহরণের পর কোথায়ও রাখার জায়গা না পেয়ে আয়াতকে খুন করে সে। তারপর সে আয়াতের বাবার কাছে টাকা দাবি করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু তার কাছে থাকা সিমটি সচল না থাকায় ফোন করতে পারেনি।
এ বিষয়ে পিবিআইয়ের ভাষ্য, আবীর মুক্তিপণের জন্য আয়াতের বাবাকে ফোন করতে একটি মোবাইলও কিনেছিল। আর আগে রাস্তায় কুঁড়িয়ে পাওয়া একটি সিম তার সংগ্রহে রেখেছিল। যেটি সচল না থাকায় ফোন করতে পারেনি।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার রাতে আয়াতের বাবা নগরীর ইপিজেড থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এর তদন্ত করছে পিবিআই।
এদিকে শনিবার আবীরের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
পুরনো খবর
শিশু আয়াত খুন: আবীরের ২ দিনের রিমান্ড
শিশু আয়াতকে খুনের ভয়ঙ্কর বর্ণনা পুলিশেরও ‘বিশ্বাস হচ্ছিল না’