দেবী দুর্গার আরেক নাম কুমারী। সনাতন ধর্ম মতে, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়িত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত।
Published : 22 Oct 2023, 01:42 PM
চট্টগ্রামের শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে ১১ কন্যা শিশুকে কুমারী রূপে পূজা করা হল মহাঅষ্টমীর সকালে।
প্রতি বছর একটি শিশুকে কুমারী রূপী পূজা করা হলেও এবারের আয়োজনে কুমারী রূপে পূজিত হয় ১১ শিশু।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর পাথরঘাটা হরচন্দ্র মুন্সেফ লেইনের শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে শুরু হয় কুমারী পূজা।
মণ্ডপে দেবী প্রতিমার সামনে আসনে বসে ছিল ১১ জন কুমারী। তাদের মাতৃজ্ঞানে পূজা করেন মন্দিরের পুরোহিত শ্যামানন্দ দাস (শ্যামল সাধু)।
দেবী দুর্গার আরেক নাম কুমারী। সনাতন ধর্ম মতে, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়িত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত।
কুমারী রূপেই দুর্গা আবির্ভূত হয়েছিলেন। নারীর মধ্যে বিরাজিত রয়েছে দেবীশক্তি।
প্রাচীন ও শাস্ত্রে থাকা কুমারী পূজার পুর্নজাগরণ ঘটে রামকৃঞ্চ পরমহংসদেবের দর্শন অনুসারে। তিনি তার স্ত্রী সারদাদেবীকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করেছিলেন। পরে ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে সেই ধারণা অনুসারে কুমারী পূজা প্রচলন করেন।
রোববার কুমারী পূজায় ‘ভৈরবী’ নামে পূজিত হয় পটিয়ার লাখেরা গ্রামের পূজা দাশ (১২)। ‘রুদ্রাণী’ নামে পূজিত হয় রাউজানের গুজরার অস্মিতা সেন (১১)। ‘অপরাজিতা’ নামে পূজিত হয় রাউজানের উত্তর দেওয়ানপুরের কৃত্তিকা চৌধুরী (১০)। নগরীর বাকলিয়া কে বি আমান আলী সড়কের বাসিন্দা সুভদ্রা বিশ্বাস প্রতীক্ষা (৯) এবং নগরীর পাথরঘাটার আনমোল বণিক (৯) পূজিত হয় ‘কালসন্দর্ভা’ নামে।
বোয়ালখালী উপজেলার উত্তর ভূর্ষীর বাসিন্দা পৌষালী রায় চৌধুরী (৮) এবং সাতকানিয়ার দক্ষিণ রায়পুরের প্রীতি ধর (৮) পূজিত হয় ‘কুজ্বিকা’ নামে।
‘মালিণী’ নামে পূজিত হয় সাত বছর বয়সী চার শিশু। তারা হল- নগরীর সতীশ বাবু লেনের নিভৃতি দত্ত, সাতকানিয়ার এওচিয়ার বাসিন্দা তিথী দাশ, আনোয়ারার গুজরা এলাকার অদ্রিতা বিশ্বাস এবং রাউজানের সুলতানপুরের অদ্রিতা চৌধুরী রিতু।
মন্দিরের আরেক পূজারী বলরাম দাস বলেন, “হিন্দু শাস্ত্রমতে সাধারণত এক থেকে ষোল বছরের কুমারীকে পূজা করার উল্লেখ রয়েছে। বয়সভেদে কুমারীর নাম ভিন্ন হয়।”
কুমারী পূজা দেখতে সমবেত ভক্তদের উদ্দেশ্যে শ্যামানন্দ দাস বলেন, “কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। কুমারী পূজা মানে প্রকৃতির পূজা।
“মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তবরূপ কুমারী পূজা। কুমারী প্রতীকে জগৎজননীর পূজায় পরম সৌভাগ্য লাভ হয়।”