চট্টগ্রামে অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন: ২ বছর আগের মামলায় আরেক দোকানি গ্রেপ্তার

একই অভিযোগে গত বছর যশোর থেকে এক দোকানিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2023, 02:26 PM
Updated : 25 Jan 2023, 02:26 PM

দুই বছর আগে কার্যক্রম বন্ধ থাকার মধ্যেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিনটি ওয়ার্ডে ১৮টি জন্ম সনদ ইস্যুর মামলায় আরও এক কম্পিউটার দোকানিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রামের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা থেকে মঙ্গলবার নাজমুল হক আরিফকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি এক থেকে দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি ও সংশোধন করে দিতেন।

২০২১ সালের জুনে অবৈধভাবে জন্মসনদ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে চট্টগ্রামে তিনটি মামলা হয়েছিল। সেসব মামলায় গত বছরের নভেম্বরে যশোরের শর্শা উপজেলা থেকে আরিফুল ইসলাম সাগর নামে এক দোকানিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, কাপাসিয়া সদর ইউপি কার্যালয়ের সামনে আরিফের কম্পিউটারের দোকান। যেখানে লোকজন সংশোধন, নিবন্ধনসহ বিভিন্ন আবেদনের জন্য যান। দোকানে জন্মনিবন্ধনের আবেদন করতে আসা লোকজনদের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে মূলত এ কাজটি করেন আরিফ।

২০২১ সালের ৮-২৮ ফেব্রুয়ারি সফটওয়্যার হালনাগাদের জন্য জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। যার কারণে ওই সময়ে কোনো জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়নি। পরে ১ মার্চ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে নতুন করে পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর জন্মনিবন্ধন ও সনদ ইস্যুর কাজ শুরু হয়।

নতুন ইউজার আইডির মাধ্যমে সফটওয়্যারে প্রবেশের পর সংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন, সফটওয়্যারের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৮টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু হয়।

নগরীর ১৬ নম্বর চকবাজার ও ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে সাতটি করে এবং ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড থেকে ৪টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। যেগুলোর ১২টি সনদ রোহিঙ্গাদের হাতে গেছে বলে ধারণা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের।

পরে ওই বছরের ৯ জুন একই দিনে চকবাজার থানায় একটি ও পতেঙ্গা থানায় দুটি মামলা করেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারীরা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২২, ২৪, ২৬, ৩৩ ও ৩৪ ধারায় মামলাগুলো করা হয়েছিল। যেগুলোর তদন্ত করছে নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম শাখা।

আসিফ মহিউদ্দিন আরও জানান, এ চক্রের সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত। আরিফ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে তথ্যগুলো আরেক জনকে দিতেন। সেই ব্যক্তি জন্মবিন্ধন করে দিতেন। আর সনদ প্রিন্ট করে দিতেন আরিফ। এভাবে প্রতিটি সনদের জন্য তিনি ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত পেতেন।

আরিফ অবৈধ উপায়ে দুই থেকে আড়াই হাজার জন্মসনদ সংশোধন ও তৈরি করেছিলেন বলে ধারণা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের।

মামলার তদন্তে আরিফসহ চারজনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই স্বপন কুমার সরকার বলেন, গত বছরের নভেম্বরে আরিফুল ইসলাম সাগর নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ঘটনার ‘মূল হোতা’ বাকী দুজনকে ধরতে তারা কাজ করছেন।

“হালনাগাদের আগে দেশের যেকোনো জায়গার কাউন্সিলর ও ইউপি কার্যালয়ের সার্ভারে প্রবেশ করতে পারতেন তারা। যার কারণে জন্ম নিবন্ধন ও সনদ ইস্যুর কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও তারা সেই সার্ভারে প্রবেশ করে নিবন্ধন করেছিলেন।”

গ্রেপ্তার আরিফকে বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হবে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন:

Also Read: কার্যক্রম বন্ধ, তার মধ্যে জন্ম নিবন্ধন হল কীভাবে?