সাবেক পিপি আবদুর রশিদ বলেন, “নিজেরা নিজেরা বসে আর আড্ডা দিয়ে একটা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতে পারে? ওরা সবাই অটো পাস।”
Published : 13 Apr 2025, 09:18 PM
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী না থাকায় ২১টি পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলের সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
রোববার বিকেলে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা তারিক আহমদ।
তিনি বলেন, “আমাদের গঠনতন্ত্রের ষষ্ঠ অনুচ্ছেদের ৪০(৩) ধারার বিধি অনুসারে চূড়ান্ত ঘোষিত প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করেছি। আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নেই।”
এক প্রশ্নে তারিক আহমদ বলেন, “আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠনের পর আর কোনো কমিটি সচল থাকে না। এখন আমরা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেছি, এটাই চূড়ান্ত ফলাফল।
“আগামী ১৬ এপ্রিল বিকেল তিনটায় নতুন কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করব।”
এভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম তুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে এই ফল ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন আওয়ামী লীগ ও বাম ঘরানার আইনজীবীরা।
এই পক্ষে সভাপতি পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক সাবেক পিপি আবদুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিজেরা নিজেরা বসে আর আড্ডা দিয়ে একটা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতে পারে? ওরা সবাই অটো পাস। এ ধরণের পরিস্থিতি সাধারণ আইনজীবীরা সমর্থন করে না।
“আপনারা বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের সাথেও কথা বলেন। তাদের মধ্যেও ৯৮ শতাংশ ভোট দিতে চান। ভোট ছাড়া এ কেমন নির্বাচন? এটা আমাদের সমিতির সদস্যের অধিকার এবং সমিতির ঐতিহ্য নষ্ট করে ফেলেছে। সাধারণ আইনজীবীরা আমাদের সাথে আছেন।”
সমিতির ২১টি পদের প্রতিটিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের ঐক্য পরিষদের একজন করেই প্রার্থী হয়েছেন। শনিবার বিকেলে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় এই ২১ জনের নামই প্রকাশ করা হয়।
রোববার তাদের সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দুটি পদ পেয়েছেন বিএনপিপন্থী দুই আইনজীবী। মোট ১৪টি পদে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
আর একটি সহ-সভাপতি পদ ও দুটি সম্পাদকীয় পদসহ মোট সাতটি পদ পেয়েছেন জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা।
বিজয়ী ঘোষিতরা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সিরাজ, সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল বারী, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, লাইব্রেরি সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মনজুর হোসাইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার।
কমিটির নির্বাহী সদস্যরা হলেন- আহসান উল্লাহ মানিক, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, হেলাল উদ্দিন, মেজবাহ উল আলম আমিন, মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, মো. রোবায়তুল করিম, মো. শাহেদ হোসাইন, মোহাম্মদ মোরশেদ, রাহেলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসাইন।
এদের মধ্যে সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সাধারণ সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং নির্বাহী কমিটির চার সদস্য হেলাল উদ্দিন, মো. শাহেদ হোসাইন, মো. রোবায়তুল করিম এবং মোহাম্মদ মোরশেদ এই সাতজন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী।
এরআগে বৃহস্পতিবার সমিতির নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরমা জমা সংগ্রহের দিন ধার্য ছিল। সেদিন বিকেল ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সময় ছিল ফরম নেয়ার।
ওই সময়ের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। কিন্তু কয়েক দফায় ফরম নিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ ও বাম ঘরানার আইনজীবীরা।
এমনকি এলডিপি নেতা ও বর্তমানে জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের পিপি শাহাদাত হোসেনও সভাপতি পদে ফরম তুলতে গেলে শারীরিক লাঞ্চনার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন।
বৃহস্পতিবার বাধার মুখে ফরম নিতে না পারা আইনজীবীরা এডহক কমিটির কাছে গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। পরবর্তীতে তারা এডহক কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের অভিযোগ, সমিতির পদগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতে নজিরবিহীন এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলো।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি আগের নির্বাচন কমিশন ‘বিভিন্নভাবে হেনস্তা, ভয়ভীতি ও হুমকির সম্মুখীন’ হওয়ার কথা বলে সমিতির নির্বাচিত কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছিল।
নির্বাচন না হলেও ১০ ফেব্রুয়ারি সমিতির নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি সমিতির সাধারণ সভায় ৫ সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি অ্যাডহক কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়।
এরপর অ্যাডহক কমিটি এ লক্ষ্যে একটি পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বিধান অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে ১৬ এপ্রিল তাদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সেদিনই ভোটগ্রহণের তারিখ ধার্য করা হয় মঙ্গলবার ঘোষিত তফসিলে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আয়োজনের জন্য ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু ৫ সদস্যের ওই কমিটিতে ‘স্বৈরাচারের দোসর’আছে এমন অভিযোগ উঠে। পরে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। এরপর আরও দু’বার নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। সবশেষ ১৪ জানুয়ারি মোহাম্মদ সোলায়মানকে প্রধান করে চতুর্থবারের মত নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
এরমধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। বাছাই শেষে ২১ পদে ৪০ জন প্রার্থী চূড়ান্ত হয়। তারা সবাই ভোটের জন্য প্রচারও চালাচ্ছিলেন পুরোদমে।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এবং আওয়ামীপন্থি ও সমমনারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। যদিও অতীতে আওয়ামীপন্থিরা আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিতেন।
এর মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি আদালত প্রাঙ্গণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং তারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সেই দাবি জানানো হয়।
বিনা ভোটে জয়ের পথে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির বিএনপি-জামায়াত
নতুন তফসিল, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ভোট ১৬ এপ্রিল
নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ, ঝুলে গেল চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির ভোট
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি নির্বাচন: ফরম নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ