ছবি প্রকাশের পাশাপাশি বেস ক্যাম্পে নেমে এসে ভিডিও বার্তা দিলেন এভারেস্ট ও লোৎসে জয়ী বাংলাদেশি এ পবর্তারোহী।
Published : 22 May 2024, 11:29 PM
প্রথম কোনো বাংলাদেশি পর্বতারোহী হিসেবে একই অভিযানে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ এভারেস্ট ও চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লোৎসে জয়ের একদিন পর ঠিকঠাকভাবে বেস ক্যাম্পে নেমে এসেছেন বাবর আলী।
বুধবার বিকালে বেস ক্যাম্পে পৌঁছান বাবর। এরপর তিনি ছোট্ট একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি এভারেস্ট ও লোৎসে চূড়ায় পৌঁছানোর পর সেখানে লাল-সবুজ পতাকা ওড়ানোর ছবিও প্রকাশ করা হয়।
এদিন রাত ৯টায় বাবর আলীর নিজের সংগঠন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের ফেইসবুক পেইজ থেকে প্রথমে এভারেস্ট চূড়ায় লাল-সবুজ পতাকা হাতে বাবর আলীর ছবি প্রকাশ করা হয়।
এর কয়েক মিনিট পরই লোৎসে চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে বাবর আলীর ছবি প্রকাশিত হয়। তিনিই বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ এই পবর্তে প্রথম বাংলাদেশি আরোহনকারী।
পর্বতারোহনের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘ডাবল হেডার’। সফল অভিযান শেষে এবার দেশে ফেরার অপেক্ষায় চিকিৎসক বাবরের।
এর আগে ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি এভারেস্ট জয় করেন। তবে এই প্রথম কেউ একই অভিযানে এভারেস্ট ও লোৎসে চূড়ায় পৌঁছালেন।
এদিন রাত ৮টার দিকে ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের ফেইসবুকে ছোট একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয় বাবর আলীর।
ভিডিও বার্তায় এ পবর্তারোহী বলেন, “হ্যালো সবাইকে। আমি আজকে ঘণ্টা তিনেক হল বেস ক্যাম্পে নেমে এসেছি এভারেস্ট ও লোৎসে সামিট শেষে।
“সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা পাশে থাকার জন্য। খুব শীঘ্রই দেশে ফিরব। ফিরলে অবশ্যই দেখা হবে। ধন্যবাদ সবাইকে।”
এর আগে সন্ধ্যা ৭টায় বাবর আলীর এভারেস্ট যাত্রার প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামিট শেষে আজ বিকেলে বাবর আলী বেস ক্যাম্পে নেমে এসেছেন। অভিযান শতভাগ সফল। তিনি পুরোপুরি সুস্থ আছেন।”
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে গত ১৯ মে এভারেস্ট জয় করেন বাবর আলী। এর দুই দিনের মাথায় ২১ মে পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লোৎসে চূড়ায় আরোহন করেন তিনি। এটিই প্রথম কোন বাংলাদেশির একই অভিযানে দুইটি ৮০০০ মিটার উর্ধ্ব উচ্চতার পর্বত আরোহন।
তবে এই দুই চূড়া জয়ের কোনো ছবি আগে পাওয়া যায়নি। তিনি বেস ক্যাম্পে নেমে আসার পরই প্রথম ছবি পাওয়া গেল।
গত ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিষয়ে জানান বাবর আলী। পরদিন ১ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে পৌঁছান লুকলাতে। সেখান থেকে পথচলা শুরু করে ১০ এপ্রিল বাবর পৌঁছে যান এভারেস্ট বেসক্যাম্পে।
এরপর ১৬ এপ্রিল সামিট করেন ২০ হাজার ৭৫ ফুট উচ্চতার লবুচে ইস্ট পর্বতে। তারপর নানা ধাপ পেরিয়ে ১৪ মে মাঝরাতে বেসক্যাম্প থেকে শুরু হয় বাবরের স্বপ্নের পথে যাত্রা।
প্রথম দিনেই সরাসরি উঠে আসেন ক্যাম্প-২ তে, যার উচ্চতা ২১,৩০০ ফুট। পরিকল্পনা অনুসারে সেখানে দুই রাত কাটিয়ে বাবর ১৭ মে উঠে আসেন ২৪,৫০০ ফুট উচ্চতার ক্যাম্প-৩ এবং ১৮ মে আসেন ক্যাম্প-৪ এ।
২৬,০০০ ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্পের উপরের অংশকে বলা হয় ডেথ জোন। অবশেষে ১৮ মে মাঝরাতে আবারও শুরু হয় বাবরের যাত্রা এবং ভোরের প্রথম কিরণে ২৯,০৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্ট শীর্ষে উড়িয়ে দেন বাংলাদেশের পতাকা।
এভারেস্ট থেকে নেমে এসে রোববার রাতে ক্যাম্প-৪ এ বিশ্রাম নেন বাবর আলী। তারপর সোমবার রাতে লোৎসের উদ্দেশ্যে রওনা হন। মঙ্গলবার ভোরে তিনি লোৎসে চূড়ায় পৌঁছে যান।
এভারেস্ট এর মতো এই সামিটেও বাবরের সঙ্গে ছিলেন তার শেরপা সাথী বীর বাহাদুর তামাং।
২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পাঁচ জন বাংলাদেশি এভারেস্ট জয় করেন। তারা হলেন- বাংলাদেশের মুসা ইব্রাহিম, এম এ মুহিত (দুবার), নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীন ও মো. খালেদ হোসাইন।
বাবর পেশায় একজন চিকিৎসক। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বুড়িশ্চর এলাকার লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগম এর দ্বিতীয় সন্তান বাবর ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১ তম ব্যাচের ছাত্র।
কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করলেও আগের অভিযানের সময় ছুটি না মেলাতে ত্যাগ করেন চাকরির মোহ।
আরও পড়ুন:
এভারেস্টের পর লোৎসে জয়, অনন্য উচ্চতায় বাবর আলী
এভারেস্টচূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন বাবর আলী