“বৃহস্পতিবার থেকে ফেনী নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে; ফলে কাটাছড়া ইউনিয়নসহ অনেক স্থানে পানি বাড়ছে,” বলেন ইউএনও।
Published : 23 Aug 2024, 09:20 PM
চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি কিছু এলাকায় অপরিবর্তিত থাকলেও নতুন করে মীরসরাই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হচ্ছে।
মীরসরাই উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ফেনী নদীর পানি বাড়তে থাকায় এ উপজেলার ইউনিয়নগুলো এখন প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করের হাট, হিংগুলী, জোরারগঞ্জ, ধুম, ওচমানপুর, ইছাখালী ও কাটাছড়া ইউনিয়নের অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
“বৃহস্পতিবার থেকে ফেনী নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। যার কারণে নতুন করে কাটাছড়া ইউনিয়ন প্লাবিত হচ্ছে। এ ইউনিয়নটিতে আগে পানি উঠেনি। আরও অনেক স্থানে পানি বাড়ছে।”
প্লাবিত ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দুর্গত এলাকা থেকে নৌকা নিয়ে বন্যা আক্রান্তদের উদ্ধার করে আনা হচ্ছে।
দুর্গতদের অনেকেই স্বজনদের বাড়িতে উঠছেন। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি, বিত্তবান লোকজন ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসছেন।
অপরদিকে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলার কিছু জায়গায় পানি কমতে শুরু করলেও অনেক মানুষ এখনও পানিবন্দি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের হিসাবে, চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার পানিতে ৯৮টি ইউনিয়নের মোট ৫০ হাজার ৭০৬টি পরিবারের দুই লাখ ৬২ হাজার ৪০০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১ হাজার ৩০০ টন চাল ও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীসহ রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বানের পানিতে ভেসে গিয়ে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক শিশুসহ পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
তীর ও বাঁধ ভেঙেছে হালদার
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গত চার দিন ধরে হালদা নদীর বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও এখন কিছু কমেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সোহাগ তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুক্রবারও পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও কিছুটা কমেছে।”
তিনি বলেন, এদিন হালদা নদীর নারায়ণহাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বৃহস্পতিবার ১৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ এলাকায় হালদা নদীর তীর ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে।
প্রকৌশলী সোহাগ বলেন, “ফটিকছড়ি অংশে ২২টি পয়েন্টে হালদা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি পয়েন্ট বিলীন হয়ে গেছে।
“হাটহাজারীর ফরহাদাবাদে হালদা নদীতে বাঁধ ছিল না। নদীর তীরে ব্লক বসানো ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তীর উপচে পানি উপরে উঠতে শুরু করেছিল। রাতে পাড়ের ব্লক দেবে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে।”
অপরিবর্তিত ফটিকছড়ি
বন্যায় চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ফটিকছড়ি উপজেলায় কিছু স্থানে পানি কমতে শুরু করলেও বেশিরভাগ জায়গায় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। পাইন্দং, ভুজপুর, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি, সমিতির হাট ও ভক্তপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে।
“পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকার পরও পানি বেশি হওয়ায় কয়েকটি স্থানে আমরাদের ত্রাণ পৌঁছাতে কষ্ট হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ স্থানেই ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে।”
এ উপজেলায় বানের পানিতে ভেসে গিয়ে এক শিশুসহ তিনজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছেন ইউএনও মোজাম্মেল।
“দাঁতমারা, নারায়ণহাট ও ভুজপুরে ইউনিয়নের এক শিশুসহ তিনজনের মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি। তারা বানের পানিতে ভেসে গিয়েছিল,” বলেন তিনি।
‘উন্নতির দিকে’ হাটহাজারী
হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের নাজিরহাট ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে নদীর তীর ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ উপজেলার নির্বাহি কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি এলাকা বন্যা কবলিত। সবচেয়ে বেশি বন্যা কবলিত ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন।
তবে এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি একদিন আগের তুলনায় উন্নতির দিকে যাচ্ছে বলে জানান মশিউজ্জামান।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলা ছাড়াও সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, রাউজান, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, পটিয়া, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী উপজেলার বেশকিছু ইউনিয়ন বন্যা আক্রান্ত।
ফরহাদাবাদ এলাকায় বন্যার পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে এক যুবকের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন ইউএনও মশিউজ্জামান।
ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ছাড়াও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় এক যুবকর মৃত্যু তথ্য পাওয়া গেছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় থেকে।
উজানের টানা ভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বন্যার পানি উঠেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও। দুর্যোগের মধ্যে জরুরি উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণে অংশ নিচ্ছেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা।
আরও পড়ুন-
চট্টগ্রামে ৩ উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি
বন্যার্তদের পাশে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড
গোমতীর বাঁধ ভেঙে তলিয়েছে বুড়িচং, দিশেহারা মানুষ
কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়লেও ধারণক্ষমতা ছোঁয়নি, বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন