এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন বুধবার ঠিক করেছে আদালত।
Published : 08 Aug 2023, 09:14 PM
চট্টগ্রামে মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার তিন দিন পর তার স্বামী বাবুল আক্তার ঢাকায় বন্ধুর ব্যবসায় বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত চেয়েছিলেন। সে কারণে তিন লাখ টাকা ফেরত দিয়েছিলেন ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হক।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এসব তথ্য জানান সাইফুল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাবুল আক্তারের সাথে পরিচয় হওয়ার কথা জানিয়ে সাক্ষ্যে তিনি বলেন, “আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বাবুল আক্তারের সাথে পরিচয় হয়। আমি লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় বাবুল আক্তারের সাথে আমার হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
“আমি লেখাপড়া শেষে ঢাকায় চাকরি করাকালীন তার সাথে সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। পরবর্তীতে আমি চাকরি ফেলে প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করি।”
ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলায় ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, “ব্যবসার এক পর্যায়ে আমার আর্থিক সংকট দেখা দিলে আমি বাবুল আক্তারকে আমার ব্যবসায়ে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিই। উনি আমার ব্যবসায়ে ২০০৯ সালে মাহমুদা আক্তার ভাবির নামে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।
“২০১৬ সালের যেদিন মিতু ভাবি হত্যার দিন আমার মোবাইলে অপরিচিত এক নম্বর থেকে কল আসে। ফোন থেকে বলা হয়, ‘আপনি কি টাকা পাঠিয়েছেন?’ কিসের টাকা- জিজ্ঞাসা করলে বলে, ‘এসপি বাবুল আক্তার টাকার কথা বলে নাই?’ তখন কলের লাইন কেটে যায়।”
মিতু হত্যা: দুই আসামির কাছে ‘টাকা পাঠিয়েছিলেন’ বাবুলের বন্ধুর কর্মী
সাইফুল হক সাক্ষ্যে বলেন, “এর ২/৩ দিন পর আমার অফিস সহকারী মোখলেসুর রহমান ইরাদকে নিয়ে তার (বাবুল আক্তারের) শ্বশুরবাড়িতে সমবেদনা জানাতে যাই। সেসময় বাবুল আক্তার উনার বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত চান।
“একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে কোথায় টাকা পাঠাতে হবে, সেটা জেনে নিতে বলে। আমি উক্ত নম্বরটি ইরাদকে দিই। সরল মনে মানবিক দিক বিবেচনার জন্য আমার অ্যাকাউন্টসকে নির্দেশ দিই। পরবর্তীতে ইরাদের মাধ্যমে আমি জানতে পারি ৩ লক্ষ টাকা বিভিন্ন পরিমাণে বিভিন্ন নম্বরে বিকাশ করা হয়েছে।”
এর আগে গত ১৮ জুলাই আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে মোখলেসুর রহমান ইরাদ প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইফুল হকের কথায় তিনটি মোবাইল নম্বরে কয়েকবারে তিন লাখ টাকা পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে সাইফুল হক বলেন, “২০২১ সালের ৯ মে পিবিআই থেকে আমাকে উক্ত ঘটনা তদন্তের জন্য ডাকা হয়। তৎকালীন ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমারের জিজ্ঞাসাবাদে চট্টগ্রামে এসে আমি সবকিছু খুলে বলি।
“ওই সময় আমার ব্যবহৃত একটি সিম্ফোনি ফোন সিমসহ জব্দ করা হয়। পরে ১১ মে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমি জবানবন্দি দিই।”
জেরায় বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন সাইফুল হকের কাছে জানতে চান তিনি বাবুল আক্তারের সহপাঠী কি না?
জবাবে সাইফুল বলেন, “আমার শিক্ষাবর্ষ ১৯৯৩-৯৪ আর বাবুল আক্তারের ১৯৯১-৯২। আমরা একই হলে থাকতাম- সাদ্দাম হল। আমাদের গ্রামের বাড়ি পৃথক থানায়, তবে জেলা একই।”
জেরার জবাবে সাইফুল হক জানান, ২০২১ সালের ৯ মে থেকে ১১ মে সকাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামের পিবিআই অফিসে ছিলেন।
জেরায় আইনজীবী কফিল উদ্দিন জানতে চান, “বাবুলের সাথে ছাত্রজীবনে ও পরে সম্পর্কের কোনো প্রমাণ পুলিশকে দিয়েছিলেন?”
জবাবে সাইফুল হক বলেন, “কিছু ব্যবসায়িক ডকুমেন্ট দিই। পার্টনার হিসেবে ছিলেন মাহমুদা আক্তার। চুক্তিপত্রে মাহমুদা আক্তারসহ ছয় জনের নাম ছিল।”
দিনের কার্যক্রম শেষে আদালত বুধবার আবার এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে।