Published : 30 Mar 2025, 10:27 PM
চট্টগ্রাম শহরের প্রধান দুটি শিশু পার্ক বন্ধ, তাই এবার ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটি ঘিরে ‘বাড়তি’ প্রস্তুতি চলছে বন্দরনগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে।
চট্টগ্রাম শহরে সাধারণ মানুষের বিনোদনের প্রধান গন্তব্য পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। ঈদে ভিড় থাকে ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও চিড়িয়াখানার মত বিনোদনকেন্দ্রেও।
এর বাইরে শহরের বায়েজিদ লিংক রোড, কর্ণফুলী নদীর তীর ও ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সমুদ্রপাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টেও সময় কাটাতে যান মানুষ।
ঈদের ছুটি সামনে রেখে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রঙের কাজ চলছে পুরো দমে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে সেখানে।
জেলা প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত এ চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ বাঘ। এখানে বাঘের সংখ্যা ১৮টি, যার মধ্যে ৫টি বিরল সাদা বাঘ।
দুই বছর আগে আসা জলহস্তিও এই চিড়িয়াখানার একটা আকর্ষণ। দুটি সিংহ আছে; সেখানেও ভিড় থাকে মানুষের।
১০ একরের বেশি জমিতে প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানায় আছে এশিয় ভালুক, আফ্রিকান জেব্রা, কয়েজ প্রজাতির হরিণ, উল্লুক, বানর, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল, অজগর, বাঘডাশ, উঠ পাখি, ইমু, কুমির ও ঘোড়া।
চিড়িয়াখানার শেষ প্রান্তে রঙিন সিঁড়িও দর্শনার্থীদের ‘ভালো লাগার’ একটা জায়গা। এর পাশে পাখির আবাসস্থল, যেখানে রয়েছে ম্যাকাও, ময়ূর, বিভিন্ন রকম বক, টিয়াসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাৎ হোসেন শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে ৬৮ প্রজাতির ৫২০টি পশু-পাখি আছে। ঈদ সামনে রেখে আমাদের ধোয়ামোছার কাজ চলছে। রং করা হয়ে গেছে।
“ঈদের বন্ধে এবার ৬০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে আশা করছি। নিরাপত্তারক্ষীও বাড়ানো হয়েছে ঈদ উপলক্ষ্যে।”
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রবেশমূল্য ৭০টাকা। ঈদের ছুটিতে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা খোলা থাকবে।
চিড়িয়াখানার পাশেই ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। সেখানে পুরোদমে চলছে ঈদের প্রস্তুতি।
হ্রদ, পাহাড় আর বনে ঘেরা বিনোদনকেন্দ্রটি শহরের মধ্যেই ‘প্রকৃতির আয়োজনে’ ভরপুর।
ফয়’স লেক কমপ্লেক্সের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদে নতুন ছয়টি রাইড স্থাপনের কাজ চলছে।
এর মধ্যে স্কাই হুপার মিডি ড্যান্স, কিডল হুইলস, কিডল টাওয়ার, এয়ারবোন শট ও ফ্লাইং বাসের মত রাইড রয়েছে।
বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, পাইরেট শিপ, ফেরিস হুইল, শিশুদের হ্যাপি জাম্প, পনি অ্যাডভেঞ্চার, বেবি ড্রাগন, সার্কাস ট্রেন ও বাম্পার বোটসের মত রাইড আগে থেকেই আছে।
ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের আরেক আকর্ষণ ‘সি ওয়ার্ল্ড ওয়াটার পার্ক’। ইঞ্জিনচালিত বোটে হ্রদ পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে। ওয়াটার পার্কে আছে ওয়েভ পুল, মাল্টি স্লাইড ও ড্যানসিং জোনের মত রাইড।
সি ওর্য়াল্ডের পাশেই ফয়’স লেক রিসোর্ট। আর দেশি-বিদেশি নানা স্বাদের খাবারের স্বাদ নেওয়া যায় পাশের লেক ভিউ রেস্টুরেন্টে।
গত কয়েক বছর ধরে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের আরেক গন্তব্য হয়ে উঠেছে হ্রদের পাশের পাহাড়ে স্থাপিত ফয়’স লেক বেইস ক্যাম্প।
খোলা আকাশের নিচে আর্চারি, ক্লাইম্বিং ওয়াল, ট্রি টপ একটিভিটি কিংবা বিশাল ফয়’স লেকে কায়াকিং ও বোট রাইড মিলবে বেসক্যাম্পে।
বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে সি ওর্য়াল্ডের ওয়াটার পার্কে থাকছে ডিজে শো, ডান্স শো এবং ম্যাজিক শো।
“পার্কের সৌন্দর্য বাড়াতে পুরো কমপ্লেক্সে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। নানা জায়গায় রংও করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে।”
চট্টগ্রামে বিনোদনকেন্দ্র হাতেগোনা। তারমধ্যে বড় দুটি বিনোদনকেন্দ্র- আগ্রাবাদের কর্ণফুলী শিশু পার্ক ও চান্দগাঁওয়ের স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পার্ক ৫ অগাস্টের পর থেকে বন্ধ।
৫ অগাস্ট স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পার্কে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এরপর সেটি আর খোলেনি।
কর্ণফুলী শিশু পার্কটি ৫ অগাস্টের পর তালা দিয়ে চলে গেছে পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আনন্দমেলা লিমিটেড।
কর্ণফুলী শিশু পার্কের জমিটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি)। সেটি ইজারা দেওয়া ছিল।
স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পার্ক পরিচালনায় আগ্রহ দেখিয়ে এর স্বত্বাধিকারী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে কয়েক মাস আগে চিঠি দিয়েছিলেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন।
সিটি করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী পার্ক দুটির বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পার্ক দুটি খোলা থাকলে এই ঈদে শিশু-কিশোররা বিনোদনের সুযোগ পেত। কিন্তু ৫ অগাস্টের পর থেকে দুটিই বন্ধ।
“কর্ণফুলী শিশু পার্ক চালুর চেষ্টা করছি। যারা চালাতেন, তারা আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, আমাদের কাছে হস্তান্তর করতে চান। কিন্তু সেখানে কিছু অবকাঠামো আছে, বিভিন্ন রাইড আছে। এগুলো রেখে চালু করতে হলে আগের পরিচালনাকারীরা কীভাবে চলে যাবেন, নতুনরা কোন শর্তে যুক্ত হবেন, সেসব ঠিক করতে হবে।”
কর্ণফুলী শিশু পার্ক পরিচালনায় ওয়ান্ডারল্যান্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহী মন্তব্য করে কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ঈদের পরপর হয়ত সিদ্ধান্ত হবে।”
স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পার্কের বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, “এটি আগে একসময় সিটি করপোরেশন চালাত। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেলে আমরা আবার চালাতে আগ্রহী। মন্ত্রণালয় থেকে কিছু জানায়নি।”
দুটি পার্ক বন্ধ থাকায় এবার ঈদে উন্মুক্ত স্থানে লোক সমাগম অন্যবারের চেয়ে বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) হুমায়ুন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও ফয়’স লেক এলাকায় লোক সমাগম খুব বেশি হয়।
“এসব এলাকায় থানাকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা থাকবে। পাশাপাশি বিশেষ ফোর্স দেওয়া হবে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করবে।”
প্রয়োজনে নগরবাসীকে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ ফোন করার পরামর্শ দেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।