“এটা কি কৃত্রিম সংকট, নাকি অন্য কোনো কারণে হচ্ছে- সরকারের সেটা খতিয়ে দেখা দরকার,” বলেন তিনি।
Published : 28 Feb 2025, 01:49 PM
রোজার আগ মুহূর্তে চট্টগ্রামের সবজি বাজার স্থিতিশীল থাকলেও বাজার থেকে ‘উধাও’ সয়াবিন তেল।
শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ও পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে সয়াবিন তেলের সংকট দেখা গেছে।
বিক্রেতাদের দাবি, প্রায় এক মাস ধরে সয়াবিন তেলের সংকট চলেছে। গত কয়েকদিন ধরে এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান তেল সরবরাহ করছে না।
শুক্রবার নগরীর বৃহত্তর বাজার রেয়াজউদ্দিন বাজারে বিভিন্ন দোকান ঘুরে কোথাও সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি।
রেয়াজউদ্দিন বাজার তামিম জেনারেল স্টোরের দোকানি কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত এক মাস ধরে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকদিন ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো তেল দেওয়া বন্ধ রেখেছে।
এসময় তিনি কয়েকটি রশিদ দেখিয়ে বলেন, “কাস্টমারদের কাছ থেকে অন্যান্য মুদি বাজারের সাথে তেল বিক্রির রশিদ কেটেছি। কিন্তু তেল দিতে পারছি না। বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের টেলিফোনে যোগাযোগ করেও সাড়া পাচ্ছি না; দুই দিন ধরে।”
এক দোকানি বললেন, “যতটুকু চাহিদা তার অর্ধেকও তেল দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলো; যার কারণে সবার কাছে তেল বিক্রি করতে পারছি না। যে অল্পকিছু তেল নিতে পারছি, সেগুলো নিয়মিত গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছি।”
রেয়াজউদ্দিন বাজারের মত তেলের একই সংকট দেখা দিচ্ছে কাজীর দেউরি বাজারেও।
সেখানকার খান ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক আব্দুস সাত্তারও জানালেন বাজারে সোয়াবিন তেল সংকটের কথা।
তিনি বলেন, প্রায় এক মাস ধরে তেলের সংকট চলছে। কিছুদিন ধরে তা বেড়েছে। ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজার সকালে বাজার করতে গিয়ে সোয়াবিন তেল কিনতে না পেরে আক্ষেপ করলেন সোহেল চৌধুরী নামে এক ক্রেতা।
তার ভাষ্য, অন্যান্য বছর বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তি থাকত। এবছর সব পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকলেও সয়াবিন তেলের একটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
আক্ষেপ করে সোহেল বলেন, “সবসময় রোজার আগে কিছু না কিছুর সংকট সৃষ্টি হয় বাজারে। স্বাভাবিকভাবে রোজায় তেলের ব্যবহার একটু বেশি হয়।
“কিন্তু তেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এটা কি কৃত্রিম সংকট, নাকি অন্য কোনো কারণে হচ্ছে- সরকারের সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।”
নগরীর নালাপাড়া এলাকার এক দোকানি বলেন, প্যাকেটজাত তেল এক মাসের বেশি সময় ধরে তারা পাচ্ছেন না।
কিছুদিন ধরে বোতলজাত তেলের সংকট সৃষ্টি কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “১০ দিন পরে গতকাল একটি প্রতিষ্ঠান তেল দিয়েছে। তাও যে পরিমাণ আমাদের চাহিদা সেটা দেয়নি।
“বৃহস্পতিবার ৫ লিটার ও ৩ লিটারের কিছু বোতল দিলেও ১ লিটারের কোনো বোতল দেয়নি।”
এদিকে সয়াবিন তেলের সংকট থাকলেও এবার রোজার আগে ছোলার দাম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।
শুক্রবার রেয়াজউদ্দিন বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছিল মানভেদে ১০৫ থেকে ১২০টাকা কেজি দরে।
এছাড়া শুক্রবার অন্যান্য সবজির দামও অনেকটা স্বাভাবিক আছে।
শুক্রবার রেয়াজউদ্দিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রোজায় বেশি প্রচলিত সবজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। বেগুন মান ও আকার ভেদে ৩০-৫০টাকায়। আর টমেটো ২০ টাকা, গাজর ২৫ টাকা, ধনিয়া পাতা ৪০টাকা ও পুদিনা পাতা ১০০টা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ৪০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হলেও শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা কেজিতে। এছাড়া আলু ২৫ টাকা, ফুল কপি ৩০ টাকা এবং বাধা কপি ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে রেয়াজউদ্দিন বাজারের বাইরে অন্য বাজারগুলোতে আলু, টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজি কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা, গরুর মাংস হাড় ছাড়া ৯৫০ টাকা এবং হাড়সহ ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
লেবুর বাজার ‘টক’
অন্যান্য সবজির দাম অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও লেবুর দাম বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
ক্রেতাদের ভাষ্য, সপ্তাহ খানেক আগেও ২০টা হালিতে লেবু পাওয়া গেলেও তা এখন দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।
শুক্রবার রেয়াজউদ্দিন বাজারে লেবু বিক্রি হচ্ছিল আকারভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ডজন। আবার কোথাও আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।