পুলিশের ভাষ্য, ওই যুবক মানসিক প্রতিবন্ধী। আগে হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ভবঘুরে প্রকৃতির এ যুবক বিভিন্ন মাজারে ঘুরে বেড়ান।
Published : 22 Oct 2023, 03:53 PM
চট্টগ্রামে একটি পূজা মণ্ডপের পাশে কোরআন শরিফ নিয়ে অবস্থান করা সন্দেহভাজন এক যুবককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা।
হাটহাজারি উপজেলার মীর্জাপুর ইউনিয়নের সোমপাড়া রক্ষা কালী মন্দির পূজা মণ্ডপে শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
আটক যুবকের নাম মো. শাহ আলম (৩০), তার বাড়ি নরসিংদীর ঘোড়াশাল উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, ওই যুবক মানসিক প্রতিবন্ধী। আগে হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ভবঘুরে প্রকৃতির এ যুবক বিভিন্ন মাজারে ঘুরে বেড়ান।
মন্দির পরিচালনা কমিটির কার্যকরী সভাপতি গোবিন্দ নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে সাদা পোশাক পড়া ওই যুবক মন্দিরের পাশে পানির পাম্পের কাছে বসে ছিলেন। দীর্ঘক্ষণ তিনি এক জায়গায় বসে থাকায় মন্দিরের লোকজনের সন্দেহ হয়। তখন পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
“পুলিশ তাকে সেখান থেকে নিয়ে সাথে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে কোরআন শরিফসহ কিছু ইসলামী বইপত্র পায়।”
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশ ওই যুবককে ধরে নিয়ে গেলেও পরে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ তাকে আটক করে।
হাটহাজারি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাহ আলমের কথাবার্তায় অসংলগ্নতা আছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে সে মানসিক প্রতিবন্ধী। তার পরিবারের সাথেও কথা বলেছি।”
পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে শাহ আলমের চিকিৎসাপত্র দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, “গত বছরের ১৬ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে চিকিৎসা নিয়েছিল। সেখানে তার মানসিক এবং কথা বলার সমস্যার কথা লেখা আছে।”
ওসি মনিরুজ্জামান বলছেন, ঘোড়াশাল থেকে চট্টগ্রামে এসে ওই যুবক বিভিন্ন মাজার, মসজিদ, মন্দিরে ঘুরে বেড়ান এবং সেখানেই থাকেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
“প্রথমে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুনরায় আটক দেখানো হয়েছে। সব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সে কী কারণে সেখানে বসেছিল, তার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে ছিল কি না সবকিছুই বিবেচনায় নিয়ে দেখা হচ্ছে।”
২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার মধ্যে কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ে দর্পণ সংঘের পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন রাখা দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। হামলা, ভাঙচুর চালানো হয় অন্তত আটটি মন্দিরে।
তার জের ধরে সেদিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা হয়, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় পাঁচজন।
পরের কয়েক দিনে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা হয়। তাতে নোয়াখালীতে নিহত হন দুজন।
পরে ওই ঘটনায় ইকবাল নামের এক যুবককে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের ভাষ্য, ইকবালই কুমিল্লায় হনুমান মূর্তির কোলে কোরআন শরীফ রেখেছিলেন। তিনি এক সময় রঙ মিস্ত্রির কাজ করতেন। তাকে এলাকাবাসী একজন ‘ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত’ হিসেবে জানে।
আর ইকবালের মা আমেনা বিবির ভাষ্য ছিল, তার ছেলে দশ বছর ধরে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’।
চলতি বছরের মার্চে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল ইকবালকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় ১৬ মাসের সাজা দেয়।