বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১১টায় একদল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সামনে মিছিল শুরু করলে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে তাতে যোগ দেন।
পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু চত্বরে আরেক দল শিক্ষার্থী নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ করে। একই সময়ে শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেয় কয়েকশ শিক্ষার্থী।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ সজল বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেশ কিছু দিন ধরে পরপর ছাত্রী হেনস্তার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর কোনো বিচার করছে না।
“তারা ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের নিজেদের ক্যাম্পাসেই নিরাপদ নই। আমর ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তা চাই। সেই সঙ্গে ছাত্রী হেনস্তার তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
শহীদ মিনার এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নুজরাত জেবিন সুমাইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনা ঘটার চার দিন হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। এভাবেই প্রকৃত আসামিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
“আমরা দ্রুততম সময়ে এই দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাতে এখানে অবস্থান নিয়েছি। আমরা চাই দোষীদের শাস্তি হোক।”
এদিকে বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসের বুদ্ধিজীবী প্রাঙ্গণে ধর্ষণ চেষ্টাকারী নিপীড়কদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
“ছাত্ররা নিজেদের দায়িত্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সর্ব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে হবে।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ঋজু লক্ষ্মী বলেন, “গত ১৭ জুলাই যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, এক শিক্ষার্থী নিজ হলের সামনে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এর দায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের।
“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পূরণ করতে পারেনি। যে ঘটনা ঘটেছে তার বিচার চাই। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য যেসব করা দরকার সেগুলো প্রশাসন যেন অতিসত্বর নিশ্চিত করে। আর কোনো বোনের এরকম পরিণতি আমরা চাই না।”
তিনি বলেন, “গতকাল রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যেসব দাবি করা হয়েছে। সেগুলোর প্রতি সংহতি জানাই। প্রশাসন যদি চার কর্মদিবসের মধ্যে দাবি মানতে না পারে, তাহলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার অঙ্গীকার দিয়েছে। সেই অঙ্গীকার যেন প্রশাসন বজায় রাখে।”
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হতাশার মোড় এলাকা থেকে রোববার রাতে হলে ফেরার সময় এক ছাত্রী ও তার বন্ধুর গতিরোধ করে পাঁচজন। তাদের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে হেনস্তা করে। মোবাইলে ছবি তুলে পরে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ওই ছাত্রীকে তারা ধর্ষণের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুধবার বৈঠক করে ছাত্রীদের রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশের নির্দেশনা দিলে ক্ষোভ আরও বাড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্য বলছে, এরকম নির্দেশনা আগেই ছিল। তবে শাটল ট্রেনের শিডিউলসহ নানা কারণে তা শিথিল ছিল।
ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে হলের ছাত্রীরা ভিসির বাংলোর সামনে অবস্থান নেয়।
তারা চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ সেখানে যান। দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার পর ছাত্রীরা হলে ফিরে যান।
তাদের চার দফা দাবি ছিল- ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান, হলে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়সীমা তুলে নেওয়া, বর্তমানের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল ভেঙে কার্যকরী সেল গঠন, যৌন নিপীড়ন সেলের কাছে এখন পর্যন্ত জমা হওয়া সমস্ত অভিযোগের বিচার করা এবং বোরবার রাতে ছাত্রীকে নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের চার কর্ম দিবসের মধ্যে শনাক্ত করে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে প্রক্টরিয়ায় বডি ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ।
আরও পড়ুন: