বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ছাত্রী হলের ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী বুধবার রাত পৌনে ১০টায় ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী তাদের সেই বিক্ষোভ থেকে বলা হয়- রাত ১০টায় ছাত্রীদের হলে ঢোকানো নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান নয়।
রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হলে ফেরার সময় ক্যাম্পাসের হতাশার মোড় এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ৫ যুবকের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হন এক নারী শিক্ষার্থী।
ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি করলেও তার সঙ্গে বুধবার এক নির্দেশনায় ছাত্রীদের রাত ১০টার মধ্যে হলে ঢোকার নির্দেশনা দেয়।
ছাত্রীদের ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশের নিয়ম দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যকর রয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইয়া।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের হলে নির্দিষ্ট সময়ে ঢোকার নির্দেশনা থাকলেও ছাত্রদের হলগুলোতে এই সংক্রান্ত কোনো বিধি-নিষেধ নেই, যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হয়েছে।
সতীর্থের উপর যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক মানববন্ধন থেকে ১০টায় ছাত্রীদের হলে ঢোকার নির্দেশনা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়।
এরপর রাতে পৌনে ১০টায় চারটি ছা্ত্রী হলের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাসফিয়া জাসারাত নোলক বলেন, “যৌন হয়রানির শিকার মেয়েটির সাথে রোববার রাতে যা হয়েছে, তা কালকে আমার সাথেও ঘটতে পারে।
“রাত ১০টার মধ্যে হল বন্ধ করে এর সমাধান করা সম্ভব না। প্রশাসনের উচিৎ ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করে এর সলিউশন করা। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই।”
আরেক শিক্ষার্থী আশরাফি নিতু বলেন, “ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করার স্বার্থে প্রশাসনের যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, কর্তৃপক্ষ সে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আর কোনো আশ্বাস আমরা শুনতে পারব না।
“মেয়েদের হলে যে সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, আমরা চাই সেটা উঠে যাক। মেয়েরাই কেন হেনস্তার শিকার হবে? আবার মেয়েরাই কেন সময়সীমার মধ্যে হলে প্রবেশ করতে হবে? আমার প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা জানাই।”
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলকে কার্যকর করা, রোববার রাতে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের চার কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া।
খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রক্টর রবিউল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “ছাত্রীরা কিছু দাবি নিয়ে হলের সামনে অবস্থান করছে, আমরা তাদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।”
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা উপাচার্যের বাংলোর সামনে উপস্থিত হন।
দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে রাত সাড়ে ১২টায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান ছাড়ে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর গোলাম কুদ্দুস লাবলু।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি জানিয়েছে। আমরা তা মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা হলে ফিরে যায়।”
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী তাসফিয়া জাসারাত নোলক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রশাসন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে- এ মর্মে আশ্বস্ত করলে আমরা আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসি।”
বিক্ষোভকারী ছাত্রীরা দাবিগুলো একটি কাগজে লিখে দিলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষর করে গ্রহণ করেন বলেও জানান নোলক।
তিনি বলেন, “যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চার কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না করে আমরা পুনরায় আন্দোলনে নামব।”যৌন নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রী মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। পরে বুধবার হাটহাজারী থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করে।