কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, আনোয়ারা উপজেলায় গড়ে ওঠা কোরিয়ান ও চায়না ইপিজেড এবং বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তার প্রয়োজনে আরও একটি পুলিশ লাইনস করতে চাইছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ।
Published : 12 Jul 2022, 09:24 AM
কর্ণফুলী উপজেলায় চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফ) কারখানা সংলগ্ন ২৫ একরের বেশি জায়গা নিয়ে নতুন পুলিশ লাইনস প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলা থেকে কিছু অংশ যুক্ত করে নতুন চারটি থানা নিয়ে মহানগর পুলিশের পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
“পাশাপাশি নগর পুলিশে লোকবলও বাড়বে। আবার কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল, আনোয়ারায় গড়ে ওঠা কোরিয়ান ও চায়না ইপিজেড, বিমানবন্দরসহ বেশকিছু নিরাপত্তার বিষয় যুক্ত আছে। সেজন্য নতুন এ পুলিশ লাইনস স্থাপনের প্রস্তার করা হয়েছে।”
প্রস্তাবিত চারটি থানার মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের দুই পাশে দুটি নতুন থানা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এর মধ্যে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, বারাশাত, রায়পুর ও বড় উঠান ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হবে বঙ্গবন্ধু টানেল পূর্ব থানা।
আর নগরীর অংশে সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে বঙ্গবন্ধু টানেল পশ্চিম থানা।
অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে কাট্টলী থানা এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে মোহরা থানা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
১৯৭৮ সালে ছয়টি থানা ও ২ হাজার ৪৮৬ জন জনবল নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কার্যক্রম। ৪৪ বছরে এ মহানগরে থানা বেড়ে হয়েছে ১৬টি। পাশাপাশি জনবল বেড়ে হয়েছে ৭ হাজারের বেশি।
চট্টগ্রামে বেশকিছু অবকাঠামো গড়ে ওঠায় নিরাপত্তার প্রয়োজনের কারণ দেখিয়ে মহানগর পুলিশের পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ একর জায়গা জুড়ে দামপাড়া পুলিশ লাইনসে আছে পাঁচটি পুরুষ এবং একটি নারী ব্যারাক। পাশাপাশি আছে স্কুল, হাসপাতাল ও অস্ত্রাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
বাহিনীর আবাসন সংকট মোকাবেলায় মনসুরাবাদ এলাকায় ১৪ একর জায়গা নিয়ে ২০১৫ সালে গড়ে ওঠে দ্বিতীয় পুলিশ লাইনস। সেখানে একটি ব্যারাক ভবন এবং টিনশেড ব্যারাক রয়েছে।
তার সাত বছর পর আওতা বাড়াতে কর্ণফুলী উপজেলার সিইউএফএল সংলগ্ন খাস জমিতে ২৫ একর জায়গা জুড়ে তৃতীয় পুলিশ লাইনস স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার তানভীর জানান, নতুন পুলিশ লাইনস স্থাপনের প্রস্তাবটি পুলিশ সদর দপ্তরে আছে। সেখান থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে যাবে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে তিনি আশা করছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরের বলছেন জানান, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, পারকী সমুদ্র সৈকত, বিমানবন্দর, ট্যানেল, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেডসহ বিভিন্ন স্থানের নিরাপত্তায় অনেক পুলিশ সদস্যের প্রয়োজন পড়বে। সেই প্রয়োজন দামপাড়া কিংবা মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনস থেকে মেটানো কঠিন হবে। কর্ণফুলীতে নতুন পুলিশ লাইনস হলে সেখান থেকে ফোর্স পাঠানো অনেকটা সহজ হবে।
আর পরিসর বাড়িয়ে যেহেতু নতুন চারটি থানা হচ্ছে, তাই সেগুলোর জন্য আবাসন ব্যবস্থা বর্তমানের দুটি পুলিশ লাইনসের মাধ্যমে সম্ভব নয়। সেজন্যও জায়গা প্রয়োজন।
সিএমপির দপ্তর জানিয়েছে, তৃতীয় পুলিশ লাইনসে ব্যারাকের পাশাপাশি থাকবে পরিবহন ডাম্পিং স্টেশন, ওয়ার্কশপ, ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, জোনাল এসি অফিস (সহকারী কমিশনার কার্যালয়), বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি এবং বন্দর জোনের উপ-কমিশনার কার্যালয়।
পুলিশ কমিশনার তানভীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে কয়েকটি থানার কিছু অংশ এবং জেলার কিছু ইউনিয়নযুক্ত করে পরিসর বাড়ানো হবে সিএমপির। জায়গা সংযোজন-বিয়োজনের প্রস্তাবটি আছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।
“আর উপজেলা থেকে যেসব এলাকাকে সিএমপির সাথে যুক্ত করা হবে, সে প্রস্তাবটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গণশুনানি পর্যায়ে আছে। আমাদের জানা মতে কাজগুলো অনেকদূর এগিয়েছে। সবমিলিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে আসবে।”