মিতু-বাবুল দম্পতির সন্তানদের শিশু আইনে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন

নিহত মাহমুদা আক্তার মিতু ও সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার দম্পতির দুই সন্তানকে শিশু আইন মেনে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনের পরবর্তী শুনানি হবে ৩০ জুন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2021, 06:05 PM
Updated : 28 June 2021, 06:31 PM

সোমবার চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস আরা এই বিষয়ে আংশিক শুনানি শেষে ওই তারিখ নির্ধারণ করেন।

আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্তের জন্য মিতু-বাবুল দম্পত্তির দুই সন্তানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) জিজ্ঞাসাবাদ করতে ১৩ জুন আদালতে আবেদন করেন।

তখন আদালত ১৫ দিনের মধ্যে তাদের আইওর কাছে হাজির করতে বাবুলের বাবা আব্দুল ওয়াদুদু মিয়া ও ভাই হাবিবুর রহমান লাবুকে নির্দেশ দেন।

এরপর লাবু শিশু আইন অনুসারে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা চেয়ে চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আবেদন করেন।

পরে তা শুনানির জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ পাঠানো হয়।

বাবুল আক্তারের ভাই মাগুরার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান লাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনার এই সময়ে বাচ্চাদের চট্টগ্রাম আদালতে নিয়ে যাওয়া কঠিন। শিশু আইনের বিধান অনুসরণ পূর্বক তাদের যাতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সেজন্য আবেদন করা হয়েছে।”

আদালতে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিতু-বাবুলের দুই সন্তান মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় এখনো ট্রমাটাইজড (আতঙ্কগ্রস্ত)। ঘটনার সময় তাদের বয়স ছিল ৭ বছর ও ৩ বছর।

বর্তমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তাদের চট্টগ্রামে আনা সম্ভব নয়। মাগুরা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আবেদনকারীর আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু তারা দু’জন শিশু তাই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সাক্ষ্য গ্রহণ শিশু আইন অনুসারে করতে হবে। সেটা আগে দেয়া আদেশে উল্লেখ নেই। তাই তা সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

“আইনগত বিষয়গুলো আজ আলোচনা হয়েছে। ৩০ জুন শুনানি হবে।”

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে।

পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়, যার বাদী ছিলেন বাবুল আক্তার নিজেই।

চলতি বছর মে মাসের শুরুতে এই মামলা চাঞ্চল্যকর মোড় নেয় নতুন তদন্তের পর পিবিআই প্রতিবেদন জমা দিলে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মামলার বাদী থেকে আসামিতে পরিণত হওয়া বাবুলকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন মামলা করার পর বাবুলের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছিলেন আইনজীবী আরিফুর রহমান।

সোমবার আরিফুর রহমান জানান ‘পেশাগত সমস্যার’ কারণে তিনি আর মামলাটি করছেন না। এর বেশি এই বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাবুল আক্তারের ভাইও জানান, আরিফুর আর মামলাটি পরিচালনা করছেন না।

অন্যদিকে আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী জানান, শুধু দুই শিশুর আবেদনের শুনানি তিনি করছেন। মূল মামলায় তিনি আইনজীবী নন।

মামলার আইও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা মিতু-বাবুল দম্পত্তির দুই সন্তানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী’ উল্লেখ করে জিজ্ঞাসাবাদ ও জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার জন্য আদালতে আবেদন করেন।

এর আগে নাতি-নাতনীকে নিজের জিম্মায় চেয়ে গতমাসে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। তিনিও এখন পর্যন্ত নাতি-নাতনীর দেখা পাননি।

বাবুল-মিতু দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে ছেলেটি (১২) মিতু খুনের সময় মায়ের সাথেই ছিল। আর মেয়েটি (৭) তখন ঘটনাস্থলের অদূরের বাসায় ছিল।