নাতি-নাতনীকে নিজের কাছে রাখতে চান বাবুল আক্তারের শ্বশুর

স্ত্রী হত্যামামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বাবুল আক্তার, এখন তার দুই সন্তানকে কাছে পেতে চাচ্ছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2021, 01:10 PM
Updated : 13 May 2021, 04:08 PM

তিনি বলেছেন, শিশু দুটির ‘নিরাপত্তার স্বার্থেই’ তাদের এখন নানা-নানীর কাছে থাকা দরকার।

দুই নাতি-নাতনির সঙ্গে তিন বছর ধরে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি বলে জানান মোশাররফ। তারা এখন কোথায় আছে, তাও জানেন না।

মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পর বুধবার তার স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে আসামি করে মামলা করেন মোশাররফ।

তার ঠিক আগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে বাবুলের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলার কথা জানায়।

চট্টগ্রাম গিয়ে পাঁচলাইশ থানায় জামাতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ ঢাকার মেরাদিয়ার হাজীপাড়ায় নিজের বাসায় চলে আসেন।

তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার নাতি-নাতনির মা নেই, এখন বাবাও গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে। তারা কেমন আছে, কোথায় আছে, কতটুকু নিরাপদে আছে? জানতে ইচ্ছা করছে।”

বাবুলের পরিবারে নাতি-নাতনিদের দেখভালের কেউ নেই দাবি করে তিনি বলেন, “বছর খানেক আগে তার (বাবুল) মা মারা গেছেন। তাদের মাতৃস্নেহ দিয়ে দেখার কেউ নেই।”

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিশু দুটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মোশাররফ বলেন, “সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছি। এখন নিরাপত্তার জন্য, ভবিষ্যতের জন্য নাতি- নাতনীদের আমাদের কাছেই থাকা প্রয়োজন।”

বাবুল-মিতুর দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলেটির বয়স এখন ১২ বছর, ছোট মেয়েটির বয়স আট বছর।

মিতু তার বড় ছেলেটিকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে বেরিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তখন ৭ বছর বয়সী ছেলের সামনেই তাকে হত্যা করা হয়।

চোখের সামনে মায়ের খুন হওয়ার ঘটনাটি শিশুটিকে তাড়িয়ে বেড়াত জানিয়ে মোশাররফ বলেন, “..  সবাইকে সকাল ৭টা-সাড়ে ৭টার দিকে বের হতে নিষেধ করত। এখন কোনো কাজে সকালে বের হলেই তার কথা মনে পড়ে।”

মাহমুদা আক্তার মিতু

২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে সড়কে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে। বাবুল চট্টগ্রাম নগর পুলিশে অতিরিক্ত উপকমিশনার ছিলেন বলে তারা ছিলেন চট্টগ্রামে। তবে খুন হওয়ার সময় তিনি ছিলেন ঢাকায়, পুলিশ সদর দপ্তরে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে।

স্ত্রী খুনের পর দুই সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে উঠেছিলেন বাবুল। পুলিশের চাকরি ছাড়ার কয়েকমাস পর আলাদা বাড়িতে ওঠেন সন্তানদের নিয়ে।

ওই সময় থেকেই মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুলকে সন্দেহ করার কথা জানাচ্ছিলেন শ্বশুর মোশাররফ। তখন বাবুল দাবি করেছিলেন, মিতুর এক বোনকে বিয়ে করতে তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল, তাতে রাজি না হওয়ায়  তারা ক্ষিপ্ত হয়েছেন।

মোশাররফ বলেন, মিতু হত্যার পর প্রায় নয় মাস তার বাসায় ছিলেন বাবুল। এরপরই একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি নিয়ে চলে যান।

“মিতুর হত্যার ঘটনা নিয়ে তাকে সন্দেহ করা হলে সে আমাদের সাথে দূরত্ব তৈরি করে। শেষে ২০১৭ সালের মার্চে নাতি-নাতনীকে নিয়ে চলে যায়।”

এরপর থেকে বাবুল পরিকল্পিতভাবে শিশু দুটিকে নানা বাড়ি থেকে আড়াল করে ফেলেন বলে অভিযোগ মোশাররফের।

“যখন স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের সাথে নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হতে থাকল, তখন সে সন্তানদের নিয়ে নিজেকে আমাদের কাছ থেকে আড়াল করে ফেলল।”

তিনি বলেন, যে হাসপাতালে চাকরি নিয়েছিলেন বাবুল, সেখানে কোয়ার্টারে গেলেও শিশু দুটির দেখা পেতেন না তারা।

“ওই কোয়ার্টারে গেলে অধিকাংশ সময় আমার স্ত্রীকে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হত না। স্কুলে গেছে, বাইরে গেছে বলে নানা অজুহাত দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হত। খুব কষ্ট পেতাম আমরা।”

বাবুল আক্তার

বাবুল আক্তারের এক স্বজনের মাধ্যমে কিছু দিন যোগাযোগ থাকলেও ২০১৮ সালের পর আর কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান মোশাররফ।

“হাসপাতালে কোয়ার্টার ছেড়ে দেওয়ার পর সে কোথায় গেছে, কোন বাসায় গিয়ে উঠেছে, তা আমরা জানতে পারিনি। ফোনে পাইনি, নাতি-নাতনিদের সাথে আর যোগাযোগ হয়ে উঠেনি।”

মোশাররফ মামলায় অভিযোগ করেছেন, অন্য নারীর সঙ্গে তার সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় মিতুকে হত্যা করা হয়।

তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অর্থ দিয়ে লোক ভাড়া করে স্ত্রীকে হত্যা করিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই।

হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল মামলা করেছিলেন। তদন্তে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় সেই মামলায় পিবিআই বুধবার অভিযোগপত্র দেওয়ার পর মোশাররফ মামলা করেন বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে। নতুন মামলায় বাবুলকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পিবিআই।