মিতুর হত্যাকারীদের ‘কয়েক দফা টাকা দেন’ বাবুল আক্তার: পিবিআই

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুর হত্যাকারীদের কয়েক দফায় ‘মোটা অঙ্কের টাকা’ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2021, 10:07 AM
Updated : 13 May 2021, 11:05 AM

এ তদন্ত সংস্থার প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন “হত্যাকারীদের বিভিন্ন ধাপে অর্থ দিয়েছেন বাবুল আক্তার, যার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।”

বাবুলের দুই বন্ধুর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রাথমকিভাবে ‘তিন লাখ টাকা’ দেওয়ার কথা এলেও সেই অঙ্ক আসলে আরও বেশি বলে পিবিআই প্রধানের ধারণা।

তার ভাষায় খুনিদের সাথে বাবুলের লেনদেন হওয়া টাকার পরিমাণ “ছয় লাখ থেকে নয় লাখও হতে পারে।”

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় প্রকাশ্য রাস্তায় খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল, তার আগে তিনি চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে বাবুল আক্তার নিজেই মামলা করেছিলেন। বুধবার সেই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে পিবিআই জানায়, মিতু হত্যায় বাবুল আক্তার ‘জড়িত’।

পাঁচলাইশ থানায় বাবুলের শ্বশুরের করা নতুন মামলায় তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডেও পেয়েছে পিবিআই।

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বলেছিলেন, হত্যাকাণ্ডের পর বাবুলের দুই বন্ধু সাইফুল হক এবং গাজী আল মামুনের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়েছিল। বাবুলের ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম সিকদার মুছাকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়েছিল।

পিবিআই বলছে, সাইফুল হক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের পূর্ব পরিচিত এবং এক সময়ের ‘ব্যবসায়িক পার্টনার’। আর কাজী আল মামুন হত্যাকাণ্ডে ‘নেতৃত্ব দেওয়া’ পলাতক সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার আত্মীয়।

ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিও দেখে ওই খুনে একাধিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছিল পুলিশ। যাদের মধ্যে ছিলেন বাবুলের ‘সোর্স’ মুছাও। কিন্তু তখন তাকে ‘চিনতেই পারেননি’ বাবুল।

পিবিআই প্রধান বলেন, “বাবুল সবসময় এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা বলতেন।”

তবে হত্যাকাণ্ডের পরপর ‘সোর্স’ মুছার সঙ্গে বাবুল আক্তারের যে কথিত ফোনালাপের খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সে বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন বনজ কুমার।

সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের সকালে ‘মুছার সঙ্গে বাবুল আক্তারের’ ২৭ সেকেন্ডের ফোনালাপের একটি রেকর্ড পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনজ কুমার বলেন, “বিষয়টি মামলার নথিতে নেই, তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

আরেক প্রশ্নের উত্তরে পিবিআই প্রধান বলেন, “টাকা লেনদেনের অকাট্য প্রমাণ এবং ভিডিও ফুটেজে মুছার অবস্থান শনাক্ত হলেও বাবুল আক্তার তাকে চিনতে না পারার বিষয়টি নতুন করে মামলা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।”

হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পর মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী এলাকায় পিবিআই মেট্রো অঞ্চলের কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পরদিন ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে পিবিআই জানায়, মিত্যু হত্যার সঙ্গে স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার ‘প্রমাণ’ পেয়েছে তারা।

পরে তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে আট জনের নামে হত্যা মামলা করেন।

মোশাররফ হোসেন বলেন, “বাবুল ২০১৩ সালে কক্সবাজারে ছিল। সেখানে একজন এনজিও কর্মকর্তার সাথে তার পরকীয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল। এ বিষয়টি আমি মামলায় উল্লেখ করেছি।”

তদন্তের সঙ্গে জড়িত পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন মামলায় ‘পরকীয়ার’ বিষয়টি উল্লেখ থাকায় সেদিকে নজর বেশি দেওয়া হবে।

বাবুল আক্তারের দায়ের করা আগের মামলার তদন্তে যেসব তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, নতুন মামলার ক্ষেত্রেও সেসব সহায়ক হবে বলে তদন্তে সময় কম লাগবে বলে মনে করছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।