সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষী হিসেবে আরও একজন জবানবন্দি দিয়েছেন।
Published : 25 May 2021, 08:25 PM
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফিউদ্দিনের আদালতে মোখলেসুর রহমান ইরাদ নামে এই ব্যক্তি জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই’র পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মামলায় তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিলেন ইরাদ।
“এই ব্যক্তি বাবুল আক্তারের ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হকের কর্মচারি।”
এই ইরাদের মাধ্যমেই বাবুল আক্তারের কথা মত মুছার কাছে বিকাশে সাড়ে তিন লাখ টাকা পঠিয়েছিলেন সাইফুল বলে জানান পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ।
এর আগে গত ১১ মে আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছিলেন সাইফুল।
তিনি জবানবন্দিতে বাবুল আক্তারের কথা মত একটি নম্বরে সাড়ে তিন লাখ টাকা পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
পিবিআই’র পরিদর্শক সন্তোষ বলেন, “সাইফুল জবানবন্দিতে যেগুলো বলেছিলেন, ইরাদও সেগুলোর সত্যতা স্বীকার করেছেন তার জবানবন্দিতে।”
পুলিশ জানায়, সাইফুল জবানবন্দিতে বলেছেন- তার অনুরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী বাবুল আক্তার তার প্রিন্টিং ব্যবসায় মিতুর নামে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।
২০১৬ সালে মিতু হত্যার পরপর মুছা তাকে (সাইফুল) ফোন করে টাকা পাঠানোর কথা বলেন। এর দুই/তিন দিন পর সমবেদনা জানাতে বাবুল আক্তারের শ্বশুর বাড়িতে গেলে বাবুল তাকে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে বিনিয়োগের অংশ থেকে তিন লাখ টাকা পাঠানোর কথা বলেন।
টাকা পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে বাবুল তার সোর্স মুছার জন্য ‘একটি কারণে’ পাঠানোর কথা বলেছিলেন।
পরে ইরাদকে দিয়ে সাইফুল দুটি নম্বরের মাধ্যমে ৫০ হাজার ও তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন।
সাইফুল যার নম্বরে বিকাশে সাড়ে তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন তার নাম ছিল কাজী আল মামুন।
বাদী থেকে আসামি এখন বাবুল আক্তার। সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তাকে স্ত্রী হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার চট্টগ্রামের আদালতে তোলেন তারই এক সময়ের সহকর্মীরা। এর মধ্য দিয়ে পাঁচ বছর আগের মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যামামলার তদন্ত উল্টো দিকে মোড় নিল। ছবি: সুমন বাবু
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে বাবুল আক্তারের সোর্স মুছাকে দেখা যায়। তবে চট্টগ্রামে একাধিক পদে দায়িত্বপালনকারী সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা তখন মুছাকে চিনতে পারেননি।
মামুনও সাইফুলের সঙ্গে একই দিন ১১ মে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে।
পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে দায়ের করা মামলায় বাদী ছিলেন বাবুল নিজেই।
এদিকে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন প্রথম দিকে জামাতার পক্ষে কথা বললেও পরে নিজেই সন্দেহের আঙুল তোলেন।
পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে হত্যার পেছনে তার জামাইয়ের যোগসাজশ রয়েছে বলে তার ধারণা।
আদালতের আদেশে পরে মিতু হত্যা মামলা যায় পিবিআইয়ের হাতে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়।
একই দিন তার ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হক ও কাজী আল মামুন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন।
তাদের জবানবন্দিতে টাকা দেয়া-নেয়ার কথা উঠে আসে বলে পুলিশ জানিয়েছিল।
এর পরদিন ১২ মে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মিতু হত্যার সঙ্গে তার স্বামী বাবুলের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ’ তারা পেয়েছেন।
ঢাকায় ওই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাবুলকে প্রধান আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে নতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এতে বাবুলের সঙ্গে মুছাকেও আসামি করা হয়েছে।
পরদিন ১৩ মে আরেক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান মিতুর হত্যাকারীদের বাবুল কয়েক দফায় ‘মোটা অঙ্কের টাকা’ দিয়েছিলেন বলে তাদের কাছে তথ্য থাকার দাবি করেন।
বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠানো হলেও তিনি জবানবন্দি দেননি।
আরও পড়ুন-