কেন খুন হতে হল মিতুকে?

বাবুল আক্তার অর্থ দিয়ে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে খুন করিয়েছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। কিন্তু কেন করালেন?

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2021, 03:12 PM
Updated : 13 May 2021, 03:13 PM

সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও বের করতে পারেনি পিবিআইর তদন্তকারীরা; যদিও বাবুলের শ্বশুর বলেছেন, জামাতার ‘পরকীয়ার’ কারণেই তার মেয়েকে খুন হতে হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি পারিবারিক কলহের সাথে এ হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র আছে কি না, তা দেখা হচ্ছে।”

মিতুর একটি খাতা জব্দ করে তা যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা।

শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের করা মামলায় বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতোমধ্যে পাঁচ দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। তাতে নানা প্রশ্নের ‍উত্তর মিলবে বলে আশা করছেন তদন্তকারীরা।

বাবুল নিজেও ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা; দক্ষ হিসেবেই বাহিনীতে পরিচিত ছিলেন তিনি।

মাহমুদা আক্তার মিতু

২০১৬ সালে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার থেকে তিনি যখন পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হয়ে ঢাকায় বদলি হন, তখন চট্টগ্রামে খুন হন তার স্ত্রী মিতু।

ওই বছরের ৫ জুন প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়  মিতুকে। চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল হত্যা মামলা করার পর বলেন, জঙ্গিরা এই খুন করেছে বলে তার সন্দেহ।

এরপর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে এসে শ্বশুরবাড়িতে উঠেছিলেন তিনি। কয়েকমাস পর সন্তানদের নিয়ে সেই বাড়ি ছাড়লে তাকে সন্দেহের কথা জানান শ্বশুর মোশাররফ হোসেন, যিনি নিজেও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত পরিদর্শক।

তার আগে নানা নাটকীয়তায় পুলিশের চাকরি ছাড়তে হয় এসপি বাবুলকে।

এদিকে চট্টগ্রামে ডিবি মিতু হত্যারহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে না পারায় তদন্তে আসে পিবিআই। দেড় বছর তদন্তের পর তারা জানায়, বাবুল  খুনি ভাড়া করে স্ত্রীকে খুন করিয়েছিলেন বলে প্রমাণ পেয়েছেন তারা।

এরপর চট্টগ্রামে গিয়ে বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে মামলা করেন শ্বশুর মোশাররফ।

বাদী থেকে আসামি এখন বাবুল আক্তার।

সেই মামলায় তিনি অভিযোগ করেছেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত এসপি থাকাকালে ভারতীয় এক নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তা জেনে যাওয়ায় মিতুর সঙ্গে বাবুলের কলহ হয়। তার জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, ভারতীয় ওই নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক এবং পারিবারিক কলহের বিষয়টির যোগসূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

সন্তোষ চাকমা বলেন, “তদন্তের প্রয়োজনে ওই নারীর কর্মস্থলে গিয়েও বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।”

বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় ওই নারী এখন বাংলাদেশে না থাকলেও তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাবেন বলে জানান তিনি।

বাবুলের বাসা থেকে ওই নারীর উপহার দেওয়া দুটি বই এবং সেগুলোতে দুজনের সম্পর্কের বিষয়ে কলমে লেখা আছে বলেও মামলায় উল্লেখ করেন মোশাররফ।

পিবিআই কর্মকর্তা সন্তোষ বলেন, “বইগুলো এবং বাবুল আক্তারকে পাঠানো এসএমএস মিতু যে খাতায় লিখে রেখেছিল বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটা আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।”

স্বামী বাবুল আক্তারের সঙ্গে মাহমুদা খানম মিতু।

হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া এবং পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বাবুল আক্তারের যোগসূত্র এবং টাকা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাবুল আক্তারের শ্বশুরের করা মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বাবুলের ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালু।