চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫৫টি (সাধারণ ও সংরক্ষিত) ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যাদেরকে সমর্থন দিয়েছে, তাদের প্রায় এক তৃতীয়াংশই, যারা এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নেবেন।
Published : 20 Feb 2020, 09:10 PM
৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো ভোট করতে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন ১০ নতুন প্রার্থী। আর নারীদের জন্য ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সমর্থন পেয়েছেন নতুন সাতজন।
আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় এই সিটি নির্বাচনে এর আগে মেয়রপ্রার্থীর মনোনয়নেও চমক দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে বাদ দিয়ে এবার নৌকার হাল তুলে দেওয়া হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীর হাতে।
আগে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন এমন কাউন্সিলদের কয়েকজনও এবার বাদ পড়েছেন।
৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদল হয়েছে ২০টিতে। যার মধ্যে দশজনই এবার প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
আর ১৪টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের অর্ধেকেই নতুন প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া হয়েছে।
সাবেক ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন পাওয়ায় খুশি মহানগর কমিটির নেতারাও।
সাধারণ ওয়ার্ডে নতুন ১০
এবার পাঁচ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে নগর ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ কাজী নূরুল আমিন মামুন, নয় নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আবছার মিয়া, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলীতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসমাইল, ১২ নম্বর সরাইপাড়া থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. নূরুল আমীনকে প্রার্থী করা হয়েছে।
গত নির্বাচনে ৫ নম্বর মোহরা ও ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলরপ্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। আর অন্য ওয়ার্ডগুলোতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হলেও এবার তাদের উপর আস্থা রাখতে পারেনি দল।
বাদ পড়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত এসব বর্তমান কাউন্সিলরদের অনেকে বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।
নতুন মনোনয়ন পাওয়াদের মধ্যে থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের বর্ষীয়ান নেতা যেমন আছেন তেমনি আছেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির সাবেক নেতাও।
১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে প্রার্থী মো. ইসমাইল রাজনীতির সাথে যুক্ত ১৯৮০ সাল থেকে।
তিনি বলেন, “অনেকদিন ধরে রাজনীতি করছি। এই মনোনয়ন দিয়ে নেত্রী তৃণমূলকে যে মূল্যায়ন করেছেন সেটাই বড় সফলতা।”
“যারা বড় পদ-পদবিতে না থেকেও দলের সব কার্যক্রমে ছিল তাদের মূল্যায়ন করায় আমরা খুশি।”
নারী আসনেও অর্ধেক নবীন
সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলরদের মধ্যে নতুন মনোনয়ন পেয়েছেন- জোহরা বেগম, তাছলিমা বেগম নূরজাহান, শিউলি দে, রুমকি সেনগুপ্ত, শাহীন আকতার রোজী, নূর আক্তার প্রমা এবং জিন্নাত আরা বেগম।
৪২ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা লীগের সভাপতি জোহরা বেগম বলেন, “কলেজ জীবন থেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত। আমরা যারা মাঠের কর্মী, তারা মন থেকে মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। সুযোগ দেওয়ায় নেত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তৃণমূলের নারীরা সুযোগ পেলে সাধারণ নারীদের জন্য কাজ করতে পারবে।”
আরেক নতুন প্রার্থী নূর আক্তার প্রমা বলেন, “ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ করে আমি মহিলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছি।
“দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে আছি। মূল্যায়ন করায় আমি খুব খুশি। আমাদের দেখে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আরও বেশি রাজনীতিতে সময় দেবে।”
নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর বদিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মনোনয়ন আসলে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া।
কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর বলেন, “চলমান সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবার প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্ন ইমেজের সাবেক ছাত্রনেতারা মনোনয়ন পেয়েছে। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের গুণগত মান বাড়বে।”
বাদ পড়েছেন যারা
বর্তমান ৪১ জন্য সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে ৩৫ জন আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তাদের মধ্যে বাদ পড়েছেন ১৪ জন।
বাদ পড়াদের মধ্যে আছেন- ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডের সাহেদ ইকবাল বাবু, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জহুরুল আলম জসীম, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের মোরশেদ আক্তার চৌধুরী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের সাবের আহমেদ, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের এফ কবির মানিক, ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ডের এস এম এরশাদ উল্লাহ, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের এইচএম সোহেল, ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডের আব্দুল কাদের ওরফে মাছ কাদের, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মাজাহারুল ইসলাম চৌধুরী, ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডের তারেক সোলায়মান সেলিম, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডের হাসান মুরাদ বিপ্লব, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের জয়নাল আবেদীন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। ১ মার্চ বাছাইয়ের পর ২ থেকে ৪ মার্চ আপিল করা যাবে এবং নিষ্পত্তি হবে ৫-৭ মার্চ। ৮ মার্চ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। ৯ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। ২৯ মার্চ ভোট।