কর্ণফুলী নদীর বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
Published : 12 Oct 2019, 09:21 PM
শনিবার নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার অভয় মিত্র ঘাটে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই আয়োজিত ‘দেশের অর্থনীতির হার্ট কর্ণফুলীর দখল-দূষণমুক্তসহ ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে পূর্বেও অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “কর্ণফুলী দেশের লাইফ লাইন। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ। কর্ণফুলীর অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
“কর্ণফুলীর বর্তমান চিত্র ভয়াবহ। এভাবে যদি চলতে থাকে অদূর ভবিষ্যতে এ নদী থাকবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। এখন যে অবস্থায় আছে তার বেশি ক্ষতি করতে দেওয়ার সুযোগ নেই।”
কর্ণফুলীর বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বেশি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “বিশ্বের মধ্যে একমাত্র ‘গড গিফটেড’ পোর্ট চট্টগ্রাম বন্দর। দুই হাজার ১০০ বছরের বেশি এ বন্দরের বয়স। কর্ণফুলী নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে ঘিরে সরকারের অনেক পরিকল্পনা আছে। কর্ণফুলী নদী বন্দরের ব্যবহারের বিষয় আছে।”
বন্দর চেয়ারম্যানের উদ্দেশে ভূমিমন্ত্রী বলেন, “নদী রক্ষায় দ্রুত যা যা করার করতে হবে। ড্রেজিং ভেরি ইমপর্টেন্টে। এগ্রেসিভলি কাজ করেন। আমরা তো আছি। আমি চাই আপনি থাকাবস্থায় একটি ম্যানুয়াল তৈরি করে যান, যাতে সাসটেইবেল হয়। দরকার হলে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসতে হবে। বন্দরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
“বন্দরকে দায়িত্ব নিতে হবে কর্ণফুলী নদী রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে। সবাই মিলে কর্ণফুলীকে রক্ষা করতে হবে। কর্ণফুলীর দুই পাড়ের শিল্পকারখানা সরাতে হবে। সিরিয়াসলি চিন্তা করতে হবে। না হলে হবে না। শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।”
সমন্বয়ের অভাব আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “সবার সঙ্গে সবাই কথা বলে ধাপে ধাপে কাজ করলে সময় বাঁচবে, টাকা বাঁচবে। সিটি করপোরেশন বলেন, সিডিএ বলেন- সবাই কিন্তু সরকারের টাকা খরচ করছে। আলটিমেটলি জনগণের টাকা যাচ্ছে। প্রপার সমন্বয় থাকলে শুধু কর্ণফুলী নয়, সাসটেইনেবল সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “কর্ণফুলী আমাদের অস্তিত্ব। কর্ণফুলীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। কর্ণফুলী নদী কেন, কী কারণে, কী জন্য দূষণ হচ্ছে এটি কমবেশি সবাই জানি, সবাই বুঝি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করলে দখল-দূষণ থেকে নদী রক্ষা পাবে।”
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, “বন্দর ও কর্ণফুলী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা ড্রেজিং করে নব্যতা বাড়িয়েছি। উপর দিকে (নদীর) নব্যতা বাড়াতে অনেক প্রতিবন্ধকতা। কারণ এখানে মাটিটা মাটি না, গার্বেজ।
“পলিথিনের উৎস বাসাবাড়ি। এটি ড্রেজিংয়ে বড় বাধা। সরকারের সদিচ্ছা আছে, মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। যেখানে ৫৬টি রিকমেন্ডেশন আছে। এটি চসিক, সিডিএ, ওয়াসা, ডিসি অফিস ও বন্দর মিলে মনিটরিং করবে। মূল কথা ড্রেজিং লাগবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিদেশি ফার্মকে দিয়ে একটি স্টাডি করাচ্ছি। কতটা সোজা করা যায় নদীকে। নদীকে সুন্দর করতে হলে কিছুটা ভাঙা লাগবে। সীমানার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা আছে। এখানে যেসব বিজনেস ও শিল্প আছে সেগুলো কোথায় রিলোকেটেড হবে সেই স্টাডি আমি পাইনি। তারাও আমাদের অর্থনীতির অংশ।”
চ্যানেল আইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান চৌধুরী ফরিদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ-সভাপতি ও সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ, কর্ণফুলী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী, হালদা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া, আইবিএফবির সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব, স্থপতি আশিক ইমরান প্রমুখ।