চট্টগ্রামে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত গাড়িচালক শাহাবউদ্দিন ও তার সহযোগী শ্যামল দে কৌশলে এক মাদ্রাসাছাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Published : 29 Jan 2019, 03:38 PM
সোমবার গভীর রাতে ফিরিঙ্গিবাজার মেরিনার্স রোডে গুলিতে শাহাবউদ্দিন (২৩) নিহত হওয়ার পর মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত জানায় পুলিশ।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান বলেন, গত রোববার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে জামালখান মোড়ের পিডিবি আবাসিক এলাকার সামনে মেয়েটিকে দেখে একটি প্রাইভেটকার দাঁড়ায়।
এ সময় গাড়িতে থাকা শাহাবউদ্দিন মেয়েটির কাছে রীমা কমিউনিটি সেন্টার কোন দিকে তা জানতে চান। মেয়েটি তা দেখিয়ে দেওয়ার পর তারা চিনবে না বলে মেয়েটিকে গাড়িতে উঠতে বলে।
“মেয়েটি গাড়িতে উঠার পর তা চালিয়ে চলে যায়। পরে তারা অস্ত্রের মুখে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় তারা মেয়েটির মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ও মোবাইল ফোনে ধর্ষণ চিত্র ধারণ করার অভিনয় করে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে মেয়েটিকে হুমকি দেয়।”
সোমবার মেয়েটি অভিযোগ করলে ধর্ষকদের ধরতে অভিযান শুরু হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী।
উপ-কমিশনার মেহেদী বলেন, গাড়িচালকদের একটি চক্র এ ধরনের অপরাধ করে আসছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ ছিল। সোমবার মেয়েটি এসে একই ধরনের অভিযোগ করে।
শাহাবউদ্দিন কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার মধ্যম কয়ার বিল এলাকার মফজল মিয়ার ছেলে। নগরীর কর্নফুলী থানার মইজ্জ্যারটেকে হানচুনীর বাপের কলোনিতে ভাড়া থাকতেন তিনি।
শাহাবউদ্দিন একজন ব্যাংক কর্মকর্তার এবং আর শ্যামল এক চিকিৎসকের গাড়ি চালাতেন বলে জানান কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান।
শ্যামলের গাড়িতেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানান তিনি।
শ্যামলকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কামরুজ্জামান বলেন, রীমা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে যাওয়ার পর মেয়েটি তাকে নামিয়ে দিতে বললেও তারা না নামিয়ে সার্সন রোডের দিকে চলে যায়।
“এ সময় শ্যামল গাড়ির চালকের আসনে ছিলেন। শাহাবউদ্দিন মেয়েটিকে ধর্ষণ করে চালকের আসনে বসে ও পরে শ্যামল তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তারা কেউ গাড়ি থেকে না নেমে সিটের পাশ দিয়েই যাওয়া-আসা করে। পরে মেয়েটিকে গণি বেকারি এলাকায় নামিয়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।”
এরপর মেয়েটি থানায় অভিযোগ করে জানিয়ে তিনি বলেন, শাহাবউদ্দিন সন্ধ্যায় মেয়েটিকে দিদার মার্কেটের সাফা আর্কেড কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় অবস্থান করতে বলেন।
“মেয়েটিকে সেখানে দাঁড় করিয়ে আমরা ফাঁদ পাতি। এ সময় শাহাবউদ্দিন তার অপর এক সহযোগীকে নিয়ে সেখানে আসে। মেয়েটি গাড়ির সামনে গেলে তাকে টেনে তুলে চকবাজারের দিকে দ্রুত চলে যায়।
“গাড়িটিকে ধাওয়া করে পুলিশ গাড়ির নম্বরটি বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেসে মেসেজ দেয়। পরে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। গাড়িটি বিভিন্ন দিকে ঘুরে লালদিঘীর মাঠের সামনে পৌছালে শাহাবউদ্দিন মেয়েটিকে রেখে গাড়ি থেকে নেমে হকার্স মার্কেটের ভেতর দৌঁড়ে ঢুকে যায় “
পরে লালদিঘীর মাঠের সামনে থেকে গাড়িটি আটক করে মেয়টিকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।
কামরুজ্জামান জানান, ওই গাড়িটি একজন ব্যাংক কর্মকর্তার, সেটি চালাতেন শাহাবউদ্দিন। রাতে চকবাজার ডিসি রোড থেকে শ্যামলকে গ্রেপ্তারের পর ধর্ষণের ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি আটক করা হয়। ওই প্রাইভেটকারটি একজন চিকিৎসকের।
“শ্যামল বলেছে, রোববার সকালে সে তার মালিকের ছেলেকে কলেজে পৌঁছে দেওয়ার পর শাহাবউদ্দিন তাকে ফোন করে জামালখান এলাকায় আসতে বলে। আর আগে থেকেই সেখানে শাহাবউদ্দিন অবস্থান করছিলেন।”
শাহাবউদ্দিনের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এর আগেও এসেছিল বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
নিহত শাহাবউদ্দিন সোমবার সন্ধ্যায় অন্য যাকে নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তার নামও শাহাবউদ্দিন বলে জানান পরিদর্শক কামরুজ্জামান।
“তার ঠিকানাও সংগ্রহ করা হয়েছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে,” বলেন তিনি।