চট্টগ্রামের ডিসি হিলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
Published : 25 Jul 2018, 09:28 PM
বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে মুসলিম হল সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপনের বিষয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এ নিয়ে ক্ষোভের কথা জানান।
অনুষ্ঠানে মুসলিম হলকে ঘিরে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে সংবাদকর্মীরা ডিসি হিলে অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চান।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “ডিসি হিলে তো বহু বছর ধরেই অনুষ্ঠান হয়ে আসছিল এবং সেই অনুমতি তো একজন ডিসিই দিয়েছিলেন।
“চট্টগ্রামের মত শহরে একটা ঐতিহ্যবাহী স্থানে এতদিন সেটা কোনো অসুবিধা হল না। এখন অসুবিধা শুরু হল। এটা আমার কাছে খুব বিস্ময়কর লাগে।”
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ডিসি হিলে বছরে তিনটি ছাড়া অন্য অনুষ্ঠান আয়োজন না করতে আহ্বান জানান। তিন অনুষ্ঠান হল- পহেলা বৈশাখ এবং রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী।
এরপর থেকেই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ডিসি হিলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে।
এর প্রতিবাদে ‘সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ’ ও যুব ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আন্দোলনে নামে। গত ১৩ ডিসেম্বর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানায়।
এরপর প্রায় পাঁচ মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের একটি আবৃত্তি সংগঠন ডিসি হিলে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পায়। তবে এরপর আর উল্লেখযোগ্য কোনো অনুষ্ঠান হয়নি।
সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা স্থায়ী কমিটিতে এটার বিষয়ে নিন্দা জ্ঞাপন করেছি। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলতে পারে না। এটা আমাদের স্থায়ী (সংসদীয়) কমিটির সিদ্ধান্ত। স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান চিঠিটি লিখছেন। এটা স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী পরিষদ সচিবকে দেওয়া হচ্ছে।”
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আমাদের ডিসি সাহেব যারা আছেন তারা যখন বক্তৃতা দেবেন তখন বলবেন- জঙ্গিবাদ ও সমাজে যেসব অনাচার হচ্ছে সেটাকে দমন করবার জন্য সংস্কৃতি একমাত্র হাতিয়ার। এই বক্তৃতা আপনারাও দেন, আমরাও দিই।
“কিন্তু কার্যক্ষেত্রে যখন আসি, তখন দেখা যায় আমরা এতরকম নিয়মের মধ্যে পড়ে যাই। আমি যেমন প্রবলভাবে আপত্তি জানিয়েছিলাম- পহেলা বৈশাখে কেন পাঁচটার পর অনুষ্ঠান হবে না। পুলিশের কর্মকর্তাকে বলেছিলাম পাঁচটার পরে আপনি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছেন। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
তিনি বলেন, “সেখানে যদি কোনো ঘটনা ঘটে পুলিশ কি বলতে পারবে পাঁচটার পরে আমার কোনো দায়িত্ব নেই। সুতরাং সেই মানুষগুলো যদি পাঁচটার পরে কোনো অনুষ্ঠান করে আমার পুলিশ কেন সেই নিরাপত্তা দিতে পারবে না। আমাদের পুলিশ সারাদেশে সিকিউরিটি দিচ্ছে। আর একটা দিন একটা শহরে সিকিউরিটি দিতে পারবে না, এটা আমি তো বিশ্বাস করি না। সুতরাং এটা মানসিকতার ব্যপার। এটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। আমরা যদি ওউন না করি। বলার সময় আমরা একভাবে বলছি। কিন্তু যদি বাস্তবায়ন না করি তাহলে তো হবে না।”
মন্ত্রী বলেন, “আমার পরামর্শ প্রশাসন ও সংস্কৃতি কর্মীদের নিয়ে একটা কমিটি করে নীতিমালা করেন। তারা সিদ্ধান্ত নিক কোন অনুষ্ঠান করবে, আর কোন অনুষ্ঠান করবে না।”
সভায় প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, “সংস্কৃতিকর্মীদের অধিকারের জায়গা ক্ষুন্ন করা হয়েছে। প্রশাসন হাস্যকর কিছু যুক্তি তুলে ধরেছে বারেবারে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় সিটি করপোরেশন সহায়তা করে, এটা কোনো অজুহাত হতে পারে না।
“শব্দ দূষণের কথা বলা হচ্ছে। এটা তো বসলেই সমাধান হয়ে যায়। আমরা তো নির্ধারিত শব্দমাত্রা অতিক্রম করব না। মুশকিল হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা। তারা মনে করেন, এটা বাসভবন অন্য কাউকে ঢুকতে দেব না। কিন্তু আমাদের বক্তব্য এটা কি বাসভবন না চট্টগ্রামের সংস্কৃতির ঐতিহ্যের জায়গা। এটা আমরা ছেড়ে আসব না।”
রাশেদ হাসান বলেন, “মূলত উনাদের বাসভবন সেন্টিমেন্টের কারণে অনুষ্ঠান করতে পারছি না।”
এরপর মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “এটা তো বিদেশি প্রশাসন না। পাকিস্তানি বা ব্রিটিশ প্রশাসন না। বাংলাদেশি প্রশাসন যদি বাংলাদেশে মানুষের স্বার্থে কাজ না করে তাহলে কার স্বার্থে করবে। আপনার বসুন। বসে আলোচনা করে ঠিক করুন কিভাবে ডিসি হিলে অনুষ্ঠান হবে।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী প্রমুখ।