ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলায় সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে ডাকা ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
Published : 19 Dec 2017, 11:04 AM
সমাজতত্ত্ব বিভাগের এই সহকারী অধ্যাপককে কারাগারে পাঠানোর পর সোমবার দুপুর থেকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে’ ক্যাম্পাসে অবরোধ দিয়ে এই ধর্মঘট শুরু করে ছাত্রলীগের একাংশ, যার নেতৃত্বে রয়েছে দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিরা।
মঙ্গলবার সকালেও ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়ায় ক্যাম্পাস থেকে কোনো বাস শহরে আসতে পারেনি। শাটল ট্রেনও যেতে পারেনি শহর থেকে ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল থেকে অবরোধকারীরা ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়ায় ক্যাম্পাস থেকে শহরগামী কোনো বাস ছাড়েনি। ফলে অনেক শিক্ষক ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি।
শহর থেকে ক্যাম্পাসগামী সকালের শাটল ট্রেনও নগরীর ঝাউতলা স্টেশনে আটকে দেওয়ায় তা ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে পারেনি বলে জানান তিনি।
এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বলে দাবি করে অবরোধকারীদের নেতৃত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও দিয়াজ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আলমগীর টিপু বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধর্মঘটে ছাত্রলীগের আমাদের অংশের (আ জ ম নাছির অনুসারী) সমর্থন রয়েছে।”
শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
দিয়াজ হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে নেওয়া ছয় সপ্তাহের অন্তবর্তীকালীন জামিন শেষ হওয়ার পর সোমবার আদালতে হাজির হয়ে ফের জামিন আবেদন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার।
আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়ার পরপরই ক্যাম্পাসে মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগের একাংশ, যারা সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এসময় তারা শাটল ট্রেনের হোস পাইপ কেটে দিয়ে ট্রেন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটায়। পরে বেলা দেড়টার ট্রেন তিন ঘণ্টারও বেশি সময় পরে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ক্যাম্পাস ছেড়ে আসে।
জামিন আবেদনের শুনানি চলার সময়ও আদালত প্রাঙ্গণে আসামি আনোয়ারের পক্ষে মিছিল করেন আলমগীর টিপুসহ মামলার বেশ কয়েকজন আসামি ও তাদের সমর্থকরা।
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজের বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হলেও দিয়াজের মা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী জাহেদা আমিন চৌধুরী তা প্রত্যাখ্যান করে আদালতে হত্যা মামলা করেন।
শুরু থেকেই দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরে দিয়াজকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে।
পরে আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয়বারের ময়নাতদন্তে দিয়াজকে হত্যার আলামত দেখতে পান চিকিৎসকরাও।
দিয়াজের মায়ের করা মামলায় আলমগীর টিপুসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক ১০ নেতা-কর্মীর সঙ্গে তৎকালীন সহকারী প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনোয়ার হোসেনকেও আসামি করা হয়।
জামিন আবেদনের শুনানিতে ঘটনার সঙ্গে আনোয়ারের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয় এমন একটি ‘ভয়েস রেকর্ড’ আদালতে উপস্থাপনের পর বিচারক তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবীর ভাষ্য।