চট্টগ্রাম বিভাগের চার জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির ৩০টি উপজেলার নির্বাচনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভায় রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার ‘মরিয়া’ চেষ্টার নানা তথ্যও উঠে আসে।
শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ভোটার তালিকা হালনাগাদ বিষয়ে বিশেষ সভার শুরুতে প্রধান অতিথি নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, “রোহিঙ্গা বিষয়টা মহামারি আকার ধারণ করেছে। তারা ভোটার হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। ভোটার হলে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ নানা সুবিধা পাওয়া যায়।
“আগে থেকেই হয়ত আমাদের কিছুটা দুর্বলতা ছিল। জানা মতে, এখানে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের অনেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবেও আছে।”
এই নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, “যারা জনপ্রতিনিধি আছেন উনাদের অনেকেই ভোট ব্যাংক বাড়াতে চান। অনেক প্রতিষ্ঠিত রোহিঙ্গা ব্যবসায়ীও আছেন। তাদের কারো কারো স্পন্সরশিপে অনেক রোহিঙ্গা এখানে ভোটার হতে বিভিন্নভাবে তৎপর।”
মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী, প্রশাসনিক ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের বক্তব্যেও কক্সবাজার জেলার বেশ কিছু এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের ‘চাপের’ বিষয়টি উঠে আসে।
সভার শেষ পর্যায়ে সমাপনী বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমাদের জনপ্রতিনিধিদের উপর যদি ফুল ট্রাস্ট রাখা যেত, মানে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের উপরে তাহলে সমস্যাটা এত প্রবল হত না।
“কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি ভোট ব্যাংক বা নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য, স্বার্থ দেখার জন্য বিষয়টা এমন মনে করছেন। তাতে আমাদের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। উনারাও বাংলাদেশের নাগরিক। উনাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, সব কিছুর উপর আমাদের দেশ।
“দেশকে যদি ভালোবাসি সেক্ষেত্রে কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের ভোটার করা এবং সেই সুবিধায় বাংলাদেশের নাগরিক করা একদমই উচিত হবে না।”
রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে তাদের নিবন্ধনের বিষয়ে জোর দেন কমিশনার শাহাদাত।
তিনি বলেন, “নিবন্ধনের সময় তাদের বায়োমেট্রিক্সটা যদি নিতে পারি- ১০ আঙুলের ছাপ, আইরিশ, ছবি তাহলে স্থায়ী সমাধান হয়ত করতে পারব।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কক্সবাজারে ভাসমান, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা আর অন্য জেলার বাসিন্দারা আছেন।
“সঙ্গে যোগ হয়েছে যারা সৌদি ফেরত। তারা বলছে, তাদের পাসপোর্ট আছে। চেয়ারম্যানের সনদ আছে। ২০-৫০ বা একশ টাকায় এখন কক্সবাজারে চেয়ারম্যানের সনদ পাওয়া যায়।”
কক্সবাজার সদরের নির্বাচনী কর্মকর্তা বলেন, সরকারি খাস জমিতে প্রচুর অবৈধ বসতি স্থাপনাকারী আছে। সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকায় বিদ্যুৎ বিলও তারা দিতে পারে।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, যারা ভোটার হয়নি তাদের ভোটার করতে জনপ্রতিনিধিরা ‘মরিয়া’। ৫৭ হাজার ৪০২টি ফরম পূরণ হয়েছে। রেজিস্ট্রার্ড আছে আরও ২৫ হাজার নাম। এরা সবাই ভোটার হতে চায়।
“আপনারা চাপ দিচ্ছেন আবার তারাও চাপ দিচ্ছে। যে কাগজ দিতে হয় সবই কিনতে পাওয়া যায়। বিশেষ কমিটির সদস্যদের যদি যাচাইয়ের পর স্বাক্ষরের বা আইনগত কোনো বাধ্যকতা থাকে তাহলে হয়ত কিছু করা সম্ভব।”
কক্সবাজার জেলার এনএসআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “মেম্বারদের ক্ষমতা চেয়ারম্যানদের চেয়ে বেশি। তারা যেভাবে বলবে সেভাবে প্রশাসন চলবে এমনটা তাদের চাওয়া।
“ওমরাহ ভিসায় অনেকে সৌদি আরব গিয়ে সেখানে রোহিঙ্গা হিসেবেই ছিল। দেশে ফিরে আবার ভোটার হতে চাইছে।”
তিন নিকটাত্মীয়ের এনআইডির তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে নাম ও ছবি বদল, এনআইডি কার্ড ভাড়ায় আনা, এমনকি আত্মীয়-স্বজন সাজিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার চেষ্টার তথ্যও দেন মাঠ কর্মকর্তারা।
৩০টি বিশেষ অঞ্চলের বাইরেও রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে উত্তর চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলাকেও বিশেষ অঞ্চলের আওতায় আনার দাবি জানান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা।
আইনি বিষয়গুলো রোবাবার কমিশনের ‘ফুল কমিশন মিটিংয়ে’ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।