নির্বাচন পরিচালনায় সদ্য গঠিত কমিশনকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে বিএনপি তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
Published : 08 Feb 2017, 07:34 PM
বুধবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে ‘দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি’ অভিহিত করে নাসিম বলেন, “বিএনপি যে উনাকে জনতার মঞ্চের লোক বলছে সেটা একটা কারণ আছে, আর সেটা হল নির্বাচন কমিশনকে চাপের মধ্যে রাখা। আমরা এটাতে মাইন্ড করি না।
“নির্বাচন কমিশনকে চাপে রেখে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। কারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া বিএনপির সামনে কোনো বিকল্প নাই। আশা করি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামনের নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০ জনের তালিকা থেকে পাঁচজনকে নিয়ে গত সোমবার নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেন রাষ্ট্রপতি।
এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক আমলা কে এম নুরুল হুদা, যাকে জনতার মঞ্চের লোক হিসেবে অভিহিত করে তার নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।
আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব দল জনগণের রায় মেনে নেবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্যখাতে শিশুমৃত্যু হার, মাতৃমৃত্যু কমিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ রোল মডেল হয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “আমরা পোলিও মুক্ত হয়েছি, ধনুষ্টংকার মুক্ত হয়েছি। ঢাকায় অত্যাধুনিক শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হচ্ছে। চট্টগ্রামেও ক্যান্সার চিকিৎসায় অত্যাধুনিক হাসপাতাল হবে।”
প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিগগির উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে বলে অনুষ্ঠানে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম।
তিনি বলেন, নতুন এ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। শিগগির প্রধানমন্ত্রী ভিসি নিয়োগ দিবেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জায়গায়ও চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে নাসিম বলেন, খুব শিগগির প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবায়ন চট্টগ্রামবাসী দেখতে পাবেন।
মতবিনিমিয় সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন মজুমদার বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের এগার জেলার মধ্যে দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থাপনা আছে।
১০০ উপজেলার দেড় কোটি মানুষের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই শেষ ভরসা মন্তব্য করে তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে একটি কিডনি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, নিউরো সাইন্স হাসপাতাল, পঙ্গু ও মানসিক হাসপাতাল হওয়া দরকার।
“কারণ এসব রোগের উন্নত চিকিৎসা করাতে চট্টগ্রাম বিভাগের লোকদের ঢাকায় ছুটতে হয়, যা দরিদ্র মানুষগুলোর খুব আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঢাকার মত চট্টগ্রামেও বিশেষায়িত হাসপাতাল হোক।”
এ অঞ্চলের চিকিৎসা ব্যবস্থা মানসম্মত না মন্তব্য করে ডা. আলাউদ্দিন বলেন, “আমাদের এখানে প্রতিষ্ঠান নাই। কিছুদিন পর চট্টগ্রামে টানেল হবে। মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ শুরু হচ্ছে। যদি স্বাস্থ্যখাত এর সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠে তাহলে তা ভেঙে পড়বে।”
পাহাড়ি অঞ্চলে চিকিৎসকের সংকট। চিকিৎসক দিলেও নানা কারণে থাকে না বলেও জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় এগার জেলার সিভিল সার্জনরা তাদের নিজেদের অঞ্চলের সমস্যাগুলো মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। মন্ত্রী সবগুলো সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্যকর্মকর্তাদের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ ও বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক উপস্থিত ছিলেন।