পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর হিমাদ্রী মজুমদার হিমু হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের বিচার শেষ হয়েছে চার বছর পর, যে প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে বার বার।
Published : 14 Aug 2016, 07:47 PM
কুকুর লেলিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হিমুকে হত্যা করা হয় ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল। আর রোববার চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরুল ইসলাম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে জাহিদুর রহমান শাওন ও জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ পলাতক। রিয়াদের বাবা শাহ সেলিম টিপু, শাহাদাত হোসেন সাজু ও মাহবুব আলী ড্যানি রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাক্রম
# চট্টগ্রামের সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ‘এ’ লেভেল পাস করা হিমাদ্রী মজুমদার হিমু ‘শেকড়’ নামে একটি মাদকবিরোধী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
# মামলার অভিযোগে বলা হয়, চট্টগ্রামের গাড়ি ব্যবসায়ী শাহ আলম টিপুর ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদের বন্ধু শাহাদাত হোসেন সাজুকে মাদক সেবনে বাধা দেয় হিমু ও শেকড়ের সদস্যরা। এর জের ধরে টিপু তার ছেলের বন্ধুর পক্ষ নিয়ে ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর তাদের হুমকি দেয়।
# এ ঘটনায় শেকড়ের সভাপতি মো. ইসমাইল ওইদিন পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
# এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পরের বছরের ২৭ এপ্রিল শাওন, রিয়াদ, সাজু ও ড্যানি সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে হিমুকে ধরে টিপুর বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়।
# সেখানে আটকে রেখে মারধরের পর ডোবারম্যান কুকুর লেলিয়ে ও ধাক্কা দিয়ে বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয় হিমুকে।
# আহত অবস্থায় ২৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ২৩ মে ঢাকার স্কয়ার হাসপতালে মারা যায় হিমু।
# হিমুর মৃত্যুর পর তার মামা শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত ওই পাঁচজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
# মামলা হওয়ার পর পুলিশ আলামত হিসেবে টিপুর বাড়ি থেকে তিনটি কুকুর জব্দ করে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পাঠায়। সেখানে নেওয়ার পর একটি এবং কয়েক মাস পর আরেকটি কুকুর মারা গেলেও অন্য কুকুরটি এখনও চিড়িয়াখানায় আছে।
# মামলার পর বিভিন্ন সময়ে টিপুরসহ তিন আসামি গ্রেপ্তার হন। কিন্তু রিয়াদ বিদেশে পালিয়ে যান। এছাড়া জামিন নিয়ে পালিয়ে যান শাওন।
# একই বছরের ৩০ অক্টোবর পুলিশ ওই পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
# এরপর অভিযোগ গঠন করতেই লাগে ১৬ মাস। অভিযোগ গঠনের জন্য আদালত সময় নির্ধারণ করলেও তা চারবার পিছিয়ে যায়।
# এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ সময়ের আবেদন করায় এবং ২৮ নভেম্বর হরতালের কারণে অভিযোগ গঠন হয়নি। পরের বছরের ১৬ জানুয়ারি দুই আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের এবং সবশেষ ২৭ জানুয়ারি আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনে আরও দুই দফা পেছায় অভিযোগ গঠন।
# ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের তৎকালীন মহানগর দায়রা জজ এসএম মজিবুর রহমান এ মামলায় ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
# ছয় জন সাক্ষ্য দেওয়ার পর ২০১৪ সালের ২১ জুলাই এক আসামির আবেদনে ছয় মাসের জন্য এ মামলা স্থগিত করে দেয় উচ্চ আদালত।
# হাই কোর্টের একই বেঞ্চ গত ৭ অগাস্ট ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিলে বিচার কার্যক্রম আবার শুরু হয়।
# এরপর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে ২০১৪ সালের ২৭ অগাস্ট ওই আদালতে আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
# আইনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী দ্রুত বিচার টাইব্যুনালে ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ না হওয়ায় ১৯ মার্চ মামলাটি চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত আসে।
# ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫ কার্যদিবস হরতালের কারণে এ মামলার বিচার কাজ চলতে পারেনি।
# ওই আদালতে বিচারক পদ শূন্যে থাকায় সেখানেও প্রায় পাঁচ মাস থমকে থাকে বিচার কাজ। গতবছর ২৭ অগাস্ট নতুন বিচারক যোগ দিলে ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ।
# যুক্তিতর্ক উপস্থাপনেই সময় লেগে যায় প্রায় সাড়ে নয় মাস। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৬ জুলাই আদালত রায় ঘোষণার তারিখ দেয়।
# রায়ের জন্য ২৮ জুলাই তারিখ ঠিক করা হলেও বিচারক ছুটিতে থাকায় তা পিছিয়ে যায়; ১১ অগাস্ট রাখা হয় নতুন তারিখ। কিন্তু সেদিন ফুল কোর্ট রেফারেন্স থাকায় শেষ পর্যন্ত রায় ঘোষণা হয় রোববার।