চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে শিক্ষার্থী তাপস সরকারের মৃত্যুর এক বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়নি মূল আসামি আশরাফুজ্জামান আশা’কেও।
Published : 14 Dec 2015, 01:09 PM
তাপসের বন্ধুদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতার ‘আপত্তি’ আর পুলিশের কাজে ‘ধীর গতির’ কারণেই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার।
তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, চলতি ডিসেম্বরেই তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
গত বছর ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ফুল দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হলে ছাত্রলীগের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক দুই সংগঠন ভিএক্স ও সিএফসি’র কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের তাপস।
পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো সিএফসি’কে সংঘর্ষের জন্য দায়ী করে ভিএক্স (ভার্সিটি এক্সপ্রেস) এর কর্মীরা।
ঘটনার দিন বিকালেই ভিএক্স সমর্থকদের নিয়ন্ত্রিত শাহজালাল হলে অভিযান চালায় পুলিশ। অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি ২৪ জনকে আটক করা হয়।
পরে ১৬ ডিসেম্বর তাপসের বন্ধু হাফিজুর রহমান হাটহাজারী থানায় ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শাহজালাল হলে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় হাটহাজারী থানার উপ-পরিদর্শক হাবিবুর রহমানের করা মামলায় এ বছর ১৭ এপ্রিল পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।এদের মধ্যে তিনজনের নাম হাফিজুরের করা মামলার এজাহারে ছিল।
হত্যা মামলার ‘অগ্রগতি’ জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ বছর ৫ অগাস্ট থানা পুলিশের কাছ থেকে দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেন।
“আসামি শাহরীদ শুভকে গত ২২ নভেম্বর গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।”
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “এজাহারভুক্ত আসামি রূপম বিশ্বাস দাবি করেছেন, তিনি ঘটনার সময় ভারতে ছিলেন। এটি নিয়ে একটু দেরি হচ্ছে। আশা করি এ মাসেই তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারব।”
তাপস হত্যামামলার এজাহারভুক্ত অন্য আসামি রাবিদ রায়হান পক্ষ বদলে ‘বিজয়’ (সিএফসি গ্রুপের নতুন নাম) গ্রুপে চলে আসার কারণেও মামলার কার্যক্রমে ভাটা পড়ছে বলে অনেকের অভিযোগ।
তাদের দাবি, রাবিদকে সুযোগ করে দিচ্ছেন চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন, যিনি নিজেও এক সময় সিএফসির সঙ্গে ছিলেন।
তবে তাপসের ‘হত্যাকারীদের’ প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুজন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডে জড়িত কেউ আমার সাথে নেই ।”
ঘটনার দিন শাহজালাল হলে থাকায় কয়েকজন ‘নির্দোষ কর্মীও’ মামলার আসামি হয়েছে দাবি করে সুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার প্রশাসন ও পুলিশের ‘অবহেলাকে’ তাপসের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত জুন মাসেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী হত্যাকারীদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কঠোর অবস্থানের’ কথা জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জড়িতদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। কারও বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”