“যদি ইসকনকে নিষিদ্ধ করা না হয় তাহলে হেফাজতে ইসলাম তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে।”
Published : 08 Nov 2024, 11:04 PM
হিন্দুধর্মীয় সংগঠন ইসকনকে নিয়ে এক ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনার পর সংগঠনটিকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর বন্দর নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ থেকে এই দাবি জানিয়েছেন কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা।
হাজারী গলিতে ওসমান মোল্লা নামের এক ব্যবসায়ীর দোকানে ‘হামলা-ভাঙচুরের’ নিন্দাও করেছেন তারা। সেইসঙ্গে যৌথ বাহিনীর ওপর ‘হামলাকারীদের’ অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
সমাবেশে হেফাজতের কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক কামরুল ইসলাম কাসেমী বলেন, “ইসকন সনাতনের কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়, ইসকন একটি আন্তর্জাতিক ‘জঙ্গি সংগঠন’। হিন্দু ভাইয়েরা ইসকনের ফাঁদে পা দেবেন না। সনাতনী ভাইয়েরা ইসকনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতিত হয়েছে।
“বাংলাদেশে মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখে। কিন্তু হাজারী গলিতে মুসলিমের দোকানে হামলা করে তারা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে ইসকন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে চায়। ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ইসকনকে বাংলাদেশে ঠাঁই দেব না।”
হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার রব্বানী দাবি করেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলা করেছে ইসকন সদস্যরা।
“সাধারণ পথচারী ও সেনাবাহিনী রেহাই পাচ্ছে না তাদের কাছ থেকে। ছাত্রলীগ যেমন নিষিদ্ধ হয়েছে, এখন ইসকনের আড়ালে ও হিন্দুত্ববাদীদের আড়ালে ইসকন নামক সংগঠন ‘জঙ্গি তৎপরতা’ চালিয়ে যাচ্ছে। অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগের মত ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যদি ইসকনকে নিষিদ্ধ করা না হয় তাহলে হেফাজতে ইসলাম তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে।”
চট্টগ্রাম মহানগর হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন হেফাজত নেতা মাওলানা নুরনবী, সালাউদ্দিন, আশরাফ বিন ইয়াকুব, মো. শহীদ।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় থেকে চেরাগী পাহাড় মোড় হয়ে জামালখান প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
ইসকন নিয়ে এক ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে মঙ্গলবার রাতে হাজারী গলিতে তুলকালাম ঘটে যায়।
সেখানকার মিয়া শপিং সেন্টার মার্কেটের একটি দোকানের মালিক ওসমান মোল্লা ইসকনকে নিয়ে ‘ব্যাঙ্গাত্মক’পোস্ট করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে বিক্ষুব্ধরা মঙ্গলবার রাতে দলবেঁধে ওই মার্কেটের দোকানটি ঘিরে ফেলে।
পরে পুলিশ গিয়ে পোস্টদাতা ওসমানকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সে সময় তারা পুলিশকে ধাওয়া ও যৌথ বাহিনীর সদস্যদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। অ্যাসিড নিক্ষেপেরও অভিযোগ উঠে।
সেদিন রাত সাড়ে ৯টার পর সেনাবাহিনী যৌথভাবে হাজারী গলির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা ঘটনাস্থল থেকে ৮২ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর হাজারী গলির সব দোকানপাট ‘সিলগালা’করে বন্ধ করে দেন সেনাসদস্যরা।
যৌথবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় পরদিন বুধবার রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০/৬০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়।
মামলায় ‘যৌথবাহিনীর কাজে বাধা দান ও অ্যাসিড নিক্ষেপের’ অভিযোগ করা হয় বলে কোতয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান।
আর যৌথবাহিনীর হাতে আটক ৮২ জনের মধ্যে ৪৯ জনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাকি ৩৩ জনকে যাচাই বাছাই শেষে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়ার কথা জানায় পুলিশ। পরে বুধবার আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ৪৯ জনকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
একদিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে হাজারী গলির বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানের সিলগালা করা তালা খুলে দেন।
পুরনো খবর-
হাজারী গলিতে যৌথবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় মামলা