এবার কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ২ লাখ আট হাজার ৯৩ টিইইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার)।
Published : 31 Dec 2024, 09:28 PM
ডলার সংকট ও এলাসি জটিলতা কাটিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুবিধায় চট্টগ্রাম বন্দর এক বছরে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন রেকর্ড করেছে।
বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে নতুন যন্ত্রপাতি সংগ্রহসহ চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রচেষ্টায় চলতি বছরে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে বলে দাবি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আগের বছরের চেয়ে এবারে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ২ লাখ আট হাজার ৯৩ টিইইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার)। আর কার্গো হ্যান্ডলিং এক বছরে বেড়েছে ২৯ লাখ ১৮ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দর রেকর্ড করেছে। এটি বন্দরের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। এজন্য স্টেক হোল্ডারদের পাশাপাশি বন্দরের শ্রমিক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভূমিকা রয়েছে।”
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৬ টিইইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার)।
গত বছরে (২০২৩) এ পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউস।
২০২২ সালে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউস, ২০২১ সালে ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউস এবং ২০২০ সালে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল।
চলতি বছরের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কার্গো (খোলা পণ্য) হ্যান্ডলিং করেছে ১২ কোটি ৩১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৮৩ টন।
২০২৩ সালে হ্যান্ডলিং করেছিল ১২ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ২৯৩ টন খোলা পণ্য।
চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২২ সালে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮২ টন, ২০২১ সালে ১১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮ টন এবং ২০২০ সালে ১০ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৭২৪ টন কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে।
বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, “অন্যান্য সময়ের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে বাণিজ্যে গতি এসেছে। চলতি বছর কয়েক মাস কিছুটা সংকট থাকলেও পরিবর্তিত সময়ে পণ্য আমদানিতে এলসি জটিলতা এবং ডলার সংকট কাটিয়ে ওঠায় ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে।
“এছাড়া বন্দরে নতুন যন্ত্রপাতি সংযুক্ত হয়েছে। এর ফলে বন্দরের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় হ্যান্ডলিং বাড়ছে। আমরা এখন এর চেয়েও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম।”
কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড হলেও চট্টগ্রাম বন্দরে আগের বছরের চেয়ে জাহাজ আসার সংখ্যা কমেছে।
এ বছরে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৩ হাজার ৮৫৭টি। আগের বছরে জাহাজ এসেছিল ৪ হাজার ১০৩টি। ২০২২ সালে ৪ হাজার ৩৬১টি, ২০২১ সালে ৪ হাজার ২০৯টি এবং ২০২০ সালে জাহাজ আসে ৩ হাজার ৭২৮টি।
ওমর ফারুক বলছেন, “জাহাজ সংখ্যায় কমলেও কন্টেইনার ও কার্গো আসার পরিমাণ বেড়েছে। এর কারণ আগে কম ড্রাফট (পানির নিচের অংশের গভীরতা) ও দৈর্ঘ্যের জাহাজ আসত। ওইসব জাহাজে করে এক থেকে দেড় হাজার কন্টেইনার পরিবহন করা যেত।
“নিয়মিত ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দরে নিয়মিত অনেক বড় জাহাজ আসতে পারছে এবং সেসব জাহাজ দেড় থেকে দুই হাজার একক কন্টেইনার পরিবহন হচ্ছে। বর্তমান সময়ে জাহাজের সংখ্যার ওপর কন্টেইনার ও কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং নির্ভর করে না।”
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, “কয়েক মাসে কিছূটা সংকট হলেও তা কাটিয়ে বন্দর ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে এক বছরের হিসেবে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড হয়েছে।”
এতে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও বাড়ছে বলে জানান তিনি।