বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঝরেছে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি।
Published : 22 Aug 2024, 11:09 AM
ভারি বৃষ্টিতে আবারও ডুবল বন্দর চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৪১ দশমিক ৮ মিলিমিটার। সঙ্গে যোগ হয়েছে দিনের প্রথম জোয়ার। সবমিলিয়ে ডুবেছে নগরীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।
সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত ১৬ অগাস্ট থেকে বন্দর নগরীতে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে টানা ভারি বৃষ্টি চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে বৃষ্টির তীব্রতা আরো বাড়ে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে তিন ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল ৯টায় শুরু হয় দিনের প্রথম জোয়ার। ভাটা শুরু হবে বেলা ২টায়।
এরআগে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে তিন ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভারি বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে ডুবেছে নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, মেহেদীবাগ, চকবাজার, বাকলিয়া ডিসি রোড, তিন পোলের মাথা, হালিশহরের কয়েকটি এলাকাসহ নগরীর বেশকিছু এলাকা।
মেহেদীবাগ এম এম আলী রোডের বাসিন্দা সাইফুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকে রাস্তায় পানি। গাড়ি চলাচলে খুব সমস্যা হচ্ছে।
“এই রোডে কয়েকটা বেসরকারি হাসপাতাল আছে। রোগীর স্বজনরাও খুব কষ্ট করে আসা-যাওয়া করছেন।"
পানির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি বহদ্দারহাট মোড়ে । সেখানকার স্বজন সুপার মার্কেটের নিচতলা তলিয়েছে পানিতে। এছাড়া বাদুরতলা-কাপাসগোলা সড়কে হাঁটু সমান পানি দেখা গেছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা আলী আকবর খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় আছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় আছে। একারণে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে।
“আজ দিনের বেলা আরও বৃষ্টি হয়ে বিকাল থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে। তবে আরও দুয়েকদিন বৃৃষ্টি হবে। বান্দরবান ও আশেপাশের এলাকায় ভারি বৃষ্টি হবে।"
চট্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় ভারি বর্ষণ এবং পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে ঝড়ো বাতাস না থাকায় সমুদ্র বন্দরে কোনো সতর্কতা নেই আপাতত।"
টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলার বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাবার খবর পাওয়া যাচ্ছে বুধবার বিকাল থেকে।
জানতে চাইলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা উপজেলাগুলো থেকে তথ্য চেয়েছি। সেখান থেকে তথ্য পেলে তারপর জানাতে পারব।"
পাহাড় ধস ঝুঁকি, জলাবদ্ধতা ও বন্যা ঝুঁকিজনিত দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রত্যেক ইউনিয়ন, উপজেলা ও সদর হাসপাতাল মিলে মোট ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
কয়েক দশকের পুরনো জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান চারটি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৩৬টি খাল ঘিরে নেওয়া প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় আরো ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা বেড়েছে।
প্রকল্পটির পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৭২ শতাংশ।
এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
প্রতি বর্ষায় নগরী চকবাজার, মুরাদপুর, বাকলিয়ার একাংশ, দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহরের বিভিন্ন অংশসহ নানা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
ভারি বৃষ্টিতে নগরীতে কোমর সমান পানিতে ডুবে যায় দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি। চরম ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। এমনকি গত তিন বছরে বর্ষায় অরক্ষিত খাল-নালায় পড়ে মৃত্যু হয়েছে শিশুসহ ১০ জনের।
চলতি বছর মে মাসে ও জুনের শেষে কয়েকদিন বৃষ্টি হলেও পরিমাণ ছিল তুলনামূলক কম। এতে চকবাজার, কাপাসগোলা ও আগ্রাবাদে জলাবদ্ধতা হলেও অন্য এলাকাগুলোতে তা তুলনামূলক কম ছিল।